খালিদ হাসান, নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি: সুগন্ধা নদীতে খেয়া পারাপারে নলছিটিবাসীর ভোগান্তি সীমাহীন একটি সেতু নির্মিত হলে যেমনি কমবে জনদুর্ভোগ তেমনি দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের অন্তত ৭টি জেলার সাথে হবে সরাসরি যোগাযোগ। সেতু না থাকায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলাবাসীর ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলছে। নদী বিস্তৃত উপজেলা নলছিটি, ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গটিত এ উপজেলায় প্রায় ২ লাখ মানুষের অধিক বসবাস।
ঝালকাঠি জেলা শহরের দক্ষিণ পূর্বে সুগন্ধা নদীর ওপারেই নলছিটি উপজেলার অবস্থান।
এখানকার বাসিন্দাদের সুগন্ধা নদীতে ট্রলারে খেয়া পার হয়ে ঝালকাঠি জেলা শহরে যেতে হয়। ব্রিটিশ আমল থেকেই নৌকা ও ট্রলার যোগেই যাতায়াত এখানকার বসবাসকারীদের। প্রতিদিন কলেজ খেয়াঘাট, পৌরসভা খেয়াঘাট, ষাইটপাকিয়া, নয়াহাট, কাটপট্টি ও স্টিমার খেয়াঘাট দিয়ে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজের জন্য সুগন্ধা নদী পারাপার হয়ে থাকে।
শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজে যাওয়া ও অসুস্থ রোগীদের মেডিকেলে চিকিৎসা নেয়াসহ সকল সরকারি বেসরকারি অফিসের দাপ্তরিক কাজে সুগন্ধা নদী পার হয়েই ঝালকাঠি সদরে আসা যাওয়া করতে হয় জনসাধারণের। এ জনপথে রাত্র ৯টার পরেই অধিকাংশ ট্রলার পারাপার বন্ধ হয়ে গেলে ঝালকাঠি সদর থেকে চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নলছিটি উপজেলার।
নলছিটিবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সুগন্ধা নদীতে সেতু নির্মাণের। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পার করলেও নলছিটিবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার হয়নি উন্নতি, নির্মিত হয়নি সুগন্ধা সেতু। প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুল কলেজে আসা যাওয়া করা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম নয়। অনেক সময় ঠিক মতো ট্রলার পাওয়া না গেলে সময় মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেনা ছাত্রছাত্রীরা, খেয়া পারের সময় বৃষ্টি বন্যায় বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া নলছিটিরবাসীর বিভিন্ন কাজে আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে সুগন্ধা নদী পার হয়ে যেতে হয় ঝালকাঠি সদরে। আর একমাত্র ট্রলারে খেয়া পার হয়ে ঝালকাঠিতে পৌছাতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় জনসাধারণের।
সুগন্ধা নদীতে সেতু নির্মিত হলে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা বন্দরের সাথে মোংলা বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে।
কয়েক বছর আগে ঝালকাঠি স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেতু নির্মাণ শীর্ষক (সিআইবিআরআর) প্রকল্পের মাধ্যমে সুগন্ধা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠালেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সরকারি নলছিটি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী তাজরির বলেন, আমার সুগন্ধা নদীর খেয়া পার হয়ে কলেজে আসা যাওয়া করতে হয়, অনেক সময় প্রয়োজনীয় সময় ট্রালার পাওয়া যায়না, আবার বৃষ্টি বন্যা হলে আমাদের ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। নলছিটির বাসিন্দা নাদিম বলেন, আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ঝালকাঠি যেতে হয়, কিন্তু খেয়া পার হওয়া ছাড়া আমাদের যাওয়ার কোন উপায় নেই। এখানে সেতু নির্মাণ হলে নলছিটির অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নতি হত। কাঠিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ নুরুল্লা সিদ্দিকি বলেন, আমাদের নলছিটি শহরের সাথে সরাসরি যাওয়ার কোন পথনেই খেয়া পার হয়েই যেতে হয়, চাইলেই সবসময় আমরা যাতায়াত করতে পারিনা।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সহকারী প্রকৌশলী সুবীর সরকার বলেন, সুগন্ধা নদীতে ব্রিজ টি নির্মাণ হলে ঝালকাঠি সদরের সাথে পটুয়াখালী, বরগুনা, পায়রা বন্দর, কুয়াকাটা, বরিশালের বাকেরগঞ্জ সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে এবং কয়েকটি আন্তঃজেলার যোগাযোগ স্থাপন হবে, জনগণের ভোগান্তি কমবে। এ ব্যাপারে ইতিপূর্বে সেতু নির্মাণের সিআইবিআরআর প্রকল্পে একটি প্রস্তাব পাঠানো ছিলো, কিন্তু আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিলে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নিতে পারব। সেতুটি নির্মিত হলে নলছিটি উপজেলা শহরের সঙ্গে জেলার দুরত্ব কমার পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মান্নোয়ন পরিবর্তন আনবে। এবং দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।