

মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের ব্যস্ত অলিগলি দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে একটি ফলভ্যান। রঙিন ফলের সাজ, পরিচ্ছন্নতার ছাপ আর আকর্ষণীয় ডাকেই সবাই তাকে চিনে—তিনি মতিউর রহমান, এলাকার পরিচিত “পুষ্টির ফেরিওয়ালা”। বিরামপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তমপুর গ্রামে তার বসবাস। এই পরিশ্রমী মানুষটি প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে ফল বিক্রির এই পেশার সঙ্গে যুক্ত।
মতিউরের ভ্যানে থাকে ঋতুভেদে হরেক রকম ফল—আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর থেকে শুরু করে পেয়ারা, ডালিম, কলা, খেজুরসহ আরও নানা পুষ্টিকর ফল। দিনের প্রথম প্রহর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এবং ঝড় বৃষ্টির দিনেও পৌর শহরের বিভিন্ন মহল্লা, গ্রাম ও গলি ঘুরে ঘুরে তিনি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন স্বাস্থ্যসম্মত ফলমূল।
শীত এলে তার পেশায় সামান্য পরিবর্তন আসে। সে সময় তিনি হাঁস-মুরগির ডিম, কোয়েল পাখির ডিমের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবার ও পাপড় বিক্রি করেন। তবে বছরের বাকি সময়টায় তিনি মন দিয়ে ফল বিক্রির কাজই চালিয়ে যান।
স্থানীয় ইসলামপাড়া এলাকার গৃহিণী মুন্নি আক্তার বলেন, “মহিলা হিসেবে বাজারে যাওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। ফলে নিয়মিত ফল কেনা ঝামেলা হয়ে যায়। কিন্তু মতিউর ভাই আমাদের মহল্লায় এলে সহজেই তার কাছ থেকে তাজা ফল কিনতে পারি—এটা আমাদের জন্য বড় সুবিধা।”
এলাকার আরেক বাসিন্দা জানান, “বাচ্চারা জেদ করে বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চায়। কিন্তু মতিউর ভাই এলে আমরা তার কাছ থেকে নিরাপদ ও তাজা ফল কিনে বাচ্চাদের দেই। এতে তারা পুষ্টিকর খাবারেই মনোযোগী হয়।”
মতিউর রহমান শুধু একজন ফেরিওয়ালা নন, বরং তিনি শহরের অনেক মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সচেতনতার এক নীরব দূত। সৎভাবে ব্যবসা করা, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা এবং সবার সঙ্গে বিনয়ী আচরণ—এই তিন গুণই তাকে আলাদা করে তুলে ধরেছে। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ভ্যানে করে ঘুরে বেড়ালেও তার মুখে থাকে হাসি, আর গ্রাহকদের সঙ্গে থাকে আন্তরিক আচরণ।
তিনি বলেন, “মানুষের ঘরে ঘরে পুষ্টি পৌঁছে দিতে পারছি—এটাই আমার বড় আনন্দ। যতদিন সুস্থ আছি, এই কাজই করে যেতে চাই।”
পৌর শহরের অনেক মানুষের কাছে ফল সংগ্রহের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছেন মতিউর। তার মতো ছোট উদ্যোক্তারা শুধু নিজেদের পরিবারই চালান না, বরং এলাকার অর্থনীতিকেও সচল রাখেন। বিশেষ করে নারী, কর্মজীবী মানুষ এবং প্রবীণদের জন্য ঘরে বসে ফল কেনার সুযোগ তৈরি করে তিনি এ এলাকায় এক ব্যতিক্রমী ভূমিকা রেখে চলেছেন।

