

ঢাকাই সিনেমার দর্শকপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘ ২৯ বছরের তদন্তের পর নতুন করে হত্যা মামলার দায়ের করা হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর রমনা থানায় দায়ের হওয়া এই মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি এবং চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডনসহ আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে।
সালমান শাহ অভিনীত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ সিনেমায় দুই নায়িকার একজন ছিলেন সোনিয়া। এ সিনেমায় তার ঠোঁটে ‘নীল সাগর পার হয়ে তোমার কাছে এসেছি’ গানটি সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সালমানের সঙ্গে কাজের সূত্রে এ নায়িকার বেশ সখ্য ছিল বলেও জানান।
সালমানকে নিয়ে সোনিয়া বলেন, সালমানের সঙ্গে কেউ রাগ করে থাকবে সে সুযোগ ছিল না। ও খুব মিশুক ও আবেগী ছিল। সহজে যে কাউকে আপন করে নেওয়ার সক্ষমতা ছিল তার। ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ সিনেমার ‘নীল সাগর পার হয়’ গানটি আমারা চার রাত শুটিং করেছি। এরমধ্যে আমি তিন রাত তার সঙ্গে জেগে থেকে শুটিংয়ে অংশ নিয়েছি। সে সময় সারা রাত শুটিংয়ের বাইরে সালমান সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। আমার কাছে সালমান দারুণ একজন মানুষ ছিলেন।
এ অভিনেতার সঙ্গে তার আরও একটি সিনেমা হওয়ার কথা ছিল জানিয়ে বলেন, আমি ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ সিনেমার পর সালমানের সঙ্গে আরও একটি সিনেমায় নায়িকা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। দুই-একদিন শুটিংও করেছি।কিন্তু তার মৃত্যুর পর সিনেমাটি আর হয়নি।
তিনি বলেন, সালমানের মৃত্যুরদিন প্রয়াত নায়ক মান্না ভাই ও শাহিন আলমের সঙ্গে একটি সিনেমার শুটিংয়ে ছিলাম। অভিনেত্রী চম্পা আপা প্রথম মান্না ভাইকে ফোনে জানান সালমানের মৃত্যুর কথা। তারপর সবাই শুটিং বন্ধ করে আমরা ঢাকা মেডিকেলে সালমানকে দেখতে আসি। তার লাশটি দেখে মনে হয়েছে সে তখনও দুষ্টামি করছে। আমার বারবার মনে হলো, একটু পরেই সালমান বলবে আমি তো সবার সাথ ফ্যান করছিলাম।
নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের এক ধূমকেতুর নাম সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করে নিমিষেই খসে পড়েন চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে।
১৯৯৩ সালে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায়। প্রয়াত নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত সিনেমাটি দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্কার করল এক নবাগত নায়কের অসাধারণ অভিনয়শৈলী। এমনি করে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা প্রেক্ষাগৃহ মুখী হলেন, পরিচালকরা হলেন আস্বস্ত। এমনি করে সুদিন ফিরে আসে বাংলার চলচ্চিত্রে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অচেনা অজানা সালমানকে। বাংলা চলচ্চিত্রের ত্রাতা হয়ে একে একে উপহার দিলেন দুর্দান্ত ২৭টি সিনেমা। অভিনয়ের জাদু দেখালেন, সবার মন জয় করলেন আবার কাউকে কিছু না-বলে একবুক চাপা অভিমান নিয়ে চলেও গেলেন।
সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘দেন মোহর’ ও ‘তোমাকে চাই’। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘বিক্ষোভ’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ এবং ‘বিচার হবে’। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় ‘জীবন সংসার’, ‘মহামিলন’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ও ‘এই ঘর এই সংসার’ প্রভৃতি।

