ঢাকা
৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৩১
logo
প্রকাশিত : মার্চ ১৬, ২০২৫

ইহকালীন ও পরকালীন শান্তির চাবিকাঠি ইহসান

মহান আল্লাহকে খুশি করার অন্যতম আমল হলো ‘ইহসান’। শব্দটি অনেক ছোট হলেও এর অর্থ ও মাহাত্ম্য ব্যাপক। বিজ্ঞ আলেমরা ইহসানকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এটি অন্যের প্রতি অবিচার ও অন্যায়ের বিপরীত।

এর অর্থ হলো সব ধরনের কদর্য ও নিন্দনীয় কাজ পরিহার করা এবং উত্তম ও সুন্দর কাজ করা। কেউ কেউ বলেছেন, ইহসান হলো এমনভাবে দায়িত্ব পালন করা, যা শরিয়ত অনুযায়ী সর্বোত্তম হয়। আবার আরেক সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ইহসান হলো আল্লাহকে এমনভাবে উপাসনা করা যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অন্তত এই বিশ্বাস রাখা যে তিনি তোমাকে দেখছেন।

এ ছাড়া ইহসান মানে হলো দেশ ও মানুষের কল্যাণে যথাসম্ভব উপকার ও মঙ্গলসাধন করা। এককথায় বলতে গেলে ইহসান এক মহৎ গুণ, যার মধ্যে সব উন্নত গুণের সম্মিলন ঘটেছে। ইহসান মানুষকে কল্যাণকামী হতে শেখায় এবং মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত তৈরি করে।

ইহসান মানুষকে নিঃস্বার্থ দান, দ্বিধাহীন আত্মত্যাগ, অহংকারহীন অনুগ্রহ ও অন্যকে সম্মান দিতে শেখায়।

মহান আল্লাহ এই গুণের অধিকারী, কারণ তিনি তার সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় এবং সব কল্যাণ ও অনুগ্রহের মূল উৎস। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহই তো, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন অবস্থানস্থল, আকাশকে করেছেন (উঁচু গম্বুজস্বরূপ) এক ছাদ, তোমাদের আকৃতিকে করেছেন সুন্দর এবং উত্কৃষ্ট বস্তু থেকে তোমাদের রিজিক দান করেছেন। তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক। তিনি অতি বরকতময়, জগৎসমূহের প্রতিপালক।
(সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬৪)

নিচে কোরআন-হাদিসের আলোকে ইহসানের কয়েকটি প্রকার তুলে ধরা হলো :

আল্লাহর ইবাদতে ইহসান : হাদিসে জিবরাইলে রাসুল (সা.) ইহসানের এই শাখার সংজ্ঞা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ইহসান হলো তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তাঁকে দেখছ, যদি তাঁকে না দেখ তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করবে। (মুসলিম, হাদিস : ১)

মা-বাবার প্রতি ইহসান : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মা-বাবার সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে ইহসান অবলম্বনের আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত কোরো না, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, মা-বাবার কোনো একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উফ্ পর্যন্ত বোলো না এবং তাঁদের ধমক দিয়ো না; বরং তাঁদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)

এই আয়াতে মা-বাবার প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে ইহসান বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান : নবীজি (সা.) প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন, যাতে সমাজে পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। সমাজে শান্তি আসে। প্রতিবেশীর প্রতি ইহসানের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর প্রতি দয়াপরবশ হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৭২)

এতিম ও দরিদ্রদের প্রতি ইহসান : এতিম ও গরিব-দুঃখীর প্রতি ইহসান মানুষের হৃদয়কে কোমল করে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মা-বাবার পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন ও এতিম, মিসকিনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এবং (সেই সময়ের কথা স্মরণ কর) যখন আমি বনি ইসরাঈলের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম যে তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না, মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে এবং আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও মিসকিনদের সঙ্গেও। আর মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলবে, নামাজ কায়েম করবে ও জাকাত দেবে…। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৮৩)

লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ইহসান : মুমিনের উচিত, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করা। ইনসাফ বজায় রাখা, হারাম ও জুলুম থেকে বিরত থাকা। কেননা পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ‘আদল’ ও ‘ইহসান’-এর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন আর অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।(সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

বিতর্কে ইহসান : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে আর (যদি কখনো বিতর্কের দরকার পড়ে, তবে) তাদের সঙ্গে বিতর্ক করবে উত্কৃষ্ট পন্থায়।

(সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)

পশুপাখির প্রতি ইহসান : পশুপাখির প্রতি সদাচরণের অন্যতম রূপ হলো তাদের খাদ্য ও পানি দেওয়া, যত্ন নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করা। যেসব প্রাণীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের নিয়ম করেছেন, তাদের জবাই করার ক্ষেত্রেও তাদের নিয়ম মেনে চলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) পশু জবাইয়ের সময় ছুরিকে ভালোভাবে ধার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রাণী অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না পায়। তিনি আরো নিষেধ করেছেন, যেন কোনো পশুর সামনে ছুরি ধার না করা হয় এবং এক পশুর সামনে আরেক পশুকে জবাই করা না হয়।

হজরত ওমর (রা.)-ও দয়ার কারণে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন কোনো পশুর সামনে আরেকটি পশুকে জবাই না করা হয়। এটি ইসলামে দয়া ও ইহসানের অন্যতম শিক্ষা, যা শুধু মানুষের প্রতি নয়, বরং সব সৃষ্টির প্রতিও প্রযোজ্য।

কথাবার্তায় ইহসান : কথাবার্তায় উত্তম ভাষা ব্যবহার ও সম্মানসূচক শব্দ প্রয়োগও এক ধরনের ইহসান। একজন মুসলমানের উচিত আলোচনায় সুন্দর ও উত্তম ভাষা ব্যবহার করা। সে যেন সদ্ব্যবহার ও ভালো কথা বেছে নেয়, যাতে অপ্রয়োজনীয় বিরোধ সৃষ্টি না হয়। অনেক সময় তর্ক-বিতর্ক থেকে শয়তানের প্ররোচনায় তা কলহ ও সংঘর্ষে রূপ নেয়, যা সমাজে অশান্তি ও অনৈক্য ছড়িয়ে দেয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমার (মুমিন) বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন এমন কথাই বলে, যা উত্তম। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা : ইসরাঈল, আয়াত : ৫৩)

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়, মানুষ যদি তার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ইহসান অবলম্বন করত, তাহলে তার ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনের অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যেত। সমাজের চিত্র পাল্টে যেত। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যেত।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইহসান অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram