ঢাকা
২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৩:০০
logo
প্রকাশিত : জুন ২৬, ২০২৫

যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়

এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতার যে আখ্যান, তার চরম সংকটময় অধ্যায় থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো বিজয়ীর বেশে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে তেহরান যে ‘সীমিত’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটাকে ট্রাম্প সম্ভবত ইরানের নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেই ধরে নিয়েছেন। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, ‘অভিনন্দন বিশ্ব, এখন শান্তির সময়।’ কিন্তু ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে আনন্দের বাতাবরণ তৈরি হলেও যুদ্ধের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ ঠিকই সক্রিয় রয়ে গেছে।

এদিকে ইরান ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচি চালু করলে আবার হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে সতর্ক করে দিয়ে এমনটিই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগে আছেন ট্রাম্প।

সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি সেখানে এটাও বলেছেন, আগামী সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুতে মার্কিন কর্মকর্তারা বৈঠকে মিলিত হবেন। কিন্তু তিনি এই বৈঠকের স্থান ও সময় সম্পর্কে কিছুই বলেননি।
অন্যদিকে ইরানের পরমাণু প্রকল্পের স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পরের দিন (২৩ জুন) ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গত মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ দেশটির কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাও যুদ্ধবিরতির ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন।

তবে এখনো যুদ্ধবিরতি নিয়ে খানিকটা অস্বস্তি রয়ে গেছে। কারণ ইরানের যেকোনো ইস্যুতে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অথচ যুদ্ধবিরতির দুই দিন পেরিয়ে গেলেও খামেনি এই ইস্যুতে প্রকাশ্যে বা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। ফলে এই মুহূর্তে ইরান এবং ইরানের বাইরে সবারই মনোযোগের কেন্দ্রে আছেন তিনি।

তবে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি বিষয়ক কথাবার্তা সত্যিকারের কূটনৈতিক অগ্রগতি, নাকি তা আরেকটি ‘ট্রাম্পীয় মরীচিকা’, তা সময়ই বলে দেবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করতে পেরেছে? নাকি এটি তাঁর আরেকটি ‘ধ্রুপদী বিভ্রম’? এই সংঘাতের একটি অসমাপ্ত দিকও রয়েছে। সেটা হলো—ইরানের হাতে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ থাকার কথা বলা হচ্ছে, যা দ্রুত বোমায় রূপান্তর করা সম্ভব। ফলে আরো বড় একটি সংকট সামনে অপেক্ষা করছে কি না সেই প্রশ্নের সুরাহাও এখনো হয়নি।

সিএনএন বলেছে, ইরানের সামরিক নেতারা এবারের সংঘাত থেকে নতুন একটা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তা হলো—ইসলামী বিপ্লবকে বাঁচাতে হলে তাঁদের একমাত্র পথ একটি পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলা। কারণ ইরানের তরফে এখনো এমন বার্তাও আসেনি যে তারা নতুন চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পথ থেকে সরে দাঁড়াবে।

আর্মড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কেলসে ডাবেনপোর্ট বলেন, ‘ইরান তার ইউরেনিয়ামের মজুদ গোপন কোনো স্থানে সরিয়ে ফেলার যথেষ্ট সময় পেয়েছিল এবং সম্ভবত সেটিই তারা করেছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এই গোপন ইউরেনিয়াম যদি নতুন সেন্ট্রিফিউজে ঢোকানো হয়, তাহলে ইরান তিন সপ্তাহের মধ্যে দশটি বোমা বানিয়ে ফেলতে পারে।’

যুদ্ধবিরতির পর কী ঘটতে পারে? : মূল প্রশ্ন হলো, ‘এরপর কী?’ প্রশ্নটির উত্তর এখনো অজানা এবং অপ্রত্যাশিত। কারণ ট্রাম্প মূলত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাকে পাশে রেখে পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ হোয়াইট হাউস থেকে পরিচালিত শীর্ষ সহযোগীদের একটি খুব ছোট দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার মঙ্গলবার আইন প্রণেতাদের বলেছেন, আমেরিকান হামলা সত্ত্বেও ইরানের এখনো ‘উল্লেখযোগ্য কৌশলগত ক্ষমতা’ রয়েছে। ইরানিরা এখনো বিশ্বব্যাপী মার্কিন সেনা এবং আমেরিকানদের জন্য হুমকিস্বরূপ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কুপার উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তা আছে।’

ইরান কী কী অর্জন করেছে : এই সংঘাত থেকে তেহরান তার পারমাণবিক কর্মকৌশল সম্পর্কে নতুন চিন্তার পাশাপাশি সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে। অন্যদিকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের স্থিতিশীলতা সম্পর্কে শিক্ষা সম্পর্কেও বাস্তব ধারণা অর্জন করতে পেরেছে। তারা ইসরায়েলি শহর ও শহরগুলোতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধও নিয়েছে।

ক্ষতি সত্ত্বেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে। এর প্রজেক্টাইল বারবার ইসরায়েলি এবং মিত্র আঞ্চলিক বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লঙ্ঘন করেছে, যা বেসামরিক এবং সামরিক উভয় লক্ষ্যবস্তুকেই প্রভাবিত করেছে। ইরান এটাও দেখিয়েছে, দেশটি কেবল টিকে থাকতে পারে না, বরং অর্থপূর্ণ উপায়ে প্রতিশোধও নিতে পারে। এই ক্ষমতা একটি আঞ্চলিক সামরিক শক্তি হিসেবে তার অবস্থানকে আরো দৃঢ় করে তুলেছে। সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো, যুদ্ধ ইরানের জনগণকে একত্র করেছে। আর নেতানিয়াহুর জন্য একটি বড় কৌশলগত ভুল হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে যারা এত দিন ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেনি, তারা এখন তা করতে চলেছে।

‘যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছে ইরান’ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে ইরান।’ গতকাল নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, এপি, অ্যারাব নিউজ

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram