জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু এটো আজ বুধবার (২১ মে) পদত্যাগ করেছেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমার কখনও চাল কিনতে হয়নি, কারণ সমর্থকদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছি। তার এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে। কারণ দেশের মানুষ তখন রেকর্ড দামে চাল কিনে বিপাকে পড়ছেন।
রবিবার (১৮ মে) সাগা অঞ্চলে একটি সেমিনারে এই মন্তব্য করেন এটো। অনেকেই বলেন, তার কথায় সাধারণ মানুষের কষ্টের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। এ ঘটনায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সংখ্যালঘু সরকারের ওপরে রাজনৈতিক চাপ বাড়ে। দলটি আগামী জুলাই মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছেন।
পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে এটো বলেন, ‘যখন মানুষ চালের উচ্চ মূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে, তখন আমার এমন মন্তব্য করা একদমই ঠিক হয়নি।’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগ গ্রহণ করেছেন। এটো আরো বলেন, তিনি নিজে সাদা চাল কেনেন এবং যেটি উপহার হিসেবে পান তা বাদামী চাল।
জাপান সরকার ইতিমধ্যেই জরুরি মজুত থেকে বিপুল পরিমাণ চাল বাজারে ছেড়েছে। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। অনেক সুপারমার্কেট এখন সস্তায় আমদানি করা চাল বিক্রি করছে। তবুও ভোক্তারা বলছেন, বাজারে চাল ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিতরণের জটিল ব্যবস্থাই এর অন্যতম কারণ।
ইতোর পদত্যাগের পর গুঞ্জন উঠেছে, তার জায়গায় আসতে পারেন জনপ্রিয় সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি। তিনি একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সন্তান। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা নিজেও এক সময় কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি খাদ্য নিরাপত্তা ও দেশের নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে চান। তিনি কৃষি সংস্কারের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে ধান উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এখন মূল সমস্যা মোকাবিলা না করলে ভবিষ্যতের রপ্তানি পরিকল্পনা অর্থহীন হয়ে যাবে।
চালের ঘাটতি নিয়ে সরকার বলছে, তারা সরবরাহ নিয়ে চিন্তিত নয়, তবে কেন চাল ভোক্তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবহাওয়ার কারণে ফসল কম হওয়া, সার ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিই মূল কারণ বলে জানা গেছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, চাল জাপানের একটি প্রধান খাদ্য। দাম যদি প্রতিনিয়ত বাড়তেই থাকে, তাহলে জনগণের ক্ষোভও স্বাভাবিক। ৭৩ বছরের শিজুকো ওশিমা বলেন, ‘জাপানিদের জন্য চাল মানেই স্থিতিশীলতা। তাই এমন সময়ে কৃষিমন্ত্রীর এমন মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা হুমকি দিয়েছিল, এটো পদত্যাগ না করলে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। শেষমেশ তা হওয়ার আগেই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। চালের সরবরাহ ও বিতরণ ঘিরে সংকট চলছেই, আর এর মধ্যেই জাপান সরকারকে এক বড় রাজনৈতিক পরীক্ষার মুখে ফেললেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী তাকু এটো।
সূত্র : এপি