ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সংঘাতে চীনা অস্ত্র ব্যবহারের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পাকিস্তান। দেশটির দাবি, তারা চীনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান এবং পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে গত ৭ মে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি ফরাসি নির্মিত ‘রাফাল’ এবং দুটি পুরোনো রুশ নির্মিত যুদ্ধবিমান।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনী জানায়, ১১৪টি যুদ্ধবিমানের অংশগ্রহণে এই সংঘর্ষ এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এবং এটি সম্পূর্ণরূপে ‘দৃষ্টির বাইরে’ থেকে পরিচালিত হয়।
ভারত এসব দাবি সরাসরি অস্বীকার করেনি, তবে জানিয়েছে—সব পাইলট নিরাপদে রয়েছেন এবং পাকিস্তানের কিছু ‘উচ্চ-প্রযুক্তির’ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য তা অস্বীকার করে বলেছে, কেবল একটি বিমানে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষে চীনা অস্ত্র ব্যবহার নতুন কিছু নয়। তবে এই প্রথমবারের মতো চীনের তৈরি আধুনিক যুদ্ধবিমান প্রকৃত সংঘাতে ব্যবহার করা হলো। আর রাফালের জন্য এটি রণক্ষেত্রে প্রথম ক্ষতির ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
চীনের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় সরাসরি কিছু বলা না হলেও, গত ১২ মে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা শিল্পবিষয়ক প্রকাশনা চায়না স্পেস নিউজ জানায়, পাকিস্তান একটি নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষা থেকে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে এবং অন্য বিমান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেগুলো ধ্বংস করে। যদিও এতে সরাসরি চীনা সরঞ্জামের কথা বলা হয়নি, পাকিস্তানের কাছে থাকা চীনা রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সম্ভাব্য ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া যায়—যা ভারত দাবি করেছে, তারা ব্যাহত করেছে।
এই সংঘর্ষ ভারতের জন্য বেশ উদ্বেগজনক। বিগত এক দশকে ভারত ৬২টি রাফাল সংগ্রহ করেছে এবং আরও কেনার চিন্তাভাবনা করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ২০০৭ সাল থেকে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি ১৫০টি জেএফ-১৭ সংগ্রহ করেছে এবং ২০২২ সালের পর ২০টি জে-১০সি কিনেছে।
এ ঘটনার প্রভাব চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বেও পৌঁছাতে পারে, কারণ চীন নিজের ব্যবহারের জন্যও জে-১০সি ব্যবহার করে, বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক পরিকল্পনাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী চীনা কোম্পানির শেয়ারের মূল্যও এরই মধ্যে বেড়েছে।
তবে পাকিস্তানের দাবি সত্য হলেও, তা যে রাফাল বা পশ্চিমা যুদ্ধবিমানের চেয়ে জে-১০সি শ্রেষ্ঠ, তার প্রমাণ নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবু বৈশ্বিক সামরিক মহলে বিষয়টি নিয়ে জোরালো আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং অনেকেই নিজেদের কৌশল পুনর্মূল্যায়নের পথে এগোচ্ছে।