ঢাকা
১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:২৪
logo
প্রকাশিত : মে ৮, ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: উপমহাদেশের সামনে অশনি সংকেত

ভারত ও পাকিস্তান—দুটি প্রতিবেশী দেশ হলেও তাদের ইতিহাস বৈরিতা, অবিশ্বাস ও সংঘাতের দীর্ঘ ছায়ায় আচ্ছন্ন। ১৯৪৭ সালের বিভাজনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চারটি বড় যুদ্ধ হয়েছে: ১৯৪৭-৪৮, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধ। আজও এ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশেই পরমাণু অস্ত্রের মালিক হওয়ায় উত্তেজনা আরও বিপজ্জনক পিরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে।

বর্তমান সংঘাতের সূত্রপাত পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনায়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীকে দায়ী করে পাল্টা জবাব হিসেবে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায়, যেখানে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে একযোগে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। পাকিস্তান এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সীমান্তে সেনা প্রস্তুতি জোরদার করেছে এবং একে সরাসরি "আগ্রাসন" বলেও ঘোষণা দিয়েছে।

এছাড়া পাকিস্তানের তফর থেকে ভারতের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দেশটি উল্টো বলছে, এই হামলা ছিল ভারতের পরিকল্পনামাফিক। এমনকি হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততাও সেভাবে তথ্যপ্রমাণে উঠে আসেনি। যদিও হামলার ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণ গেছে।

এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, দুই দেশই এখন পারমাণবিক শক্তিধর এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ প্রায় অকার্যকর। যেকোনো সীমান্ত ভুল বা উস্কানি বিস্ফোরক যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ভারতের অভ্যন্তরে চলমান জাতীয়তাবাদী আবেগ, আর পাকিস্তানে সামরিক নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া—এই দুই মিলে রাজনীতির চেয়ে প্রতিশোধকে প্রাধান্য দেওয়া পরিস্থিতি তৈরি করছে।

এই দ্বন্দ্বের ঢেউ শুধু ভারত-পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশও এর প্রভাব থেকে নিরাপদ নয়। যুদ্ধের সম্ভাবনার খবরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক দরপতন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে আমদানি-রপ্তানির সম্ভাব্য বিঘ্ন, পণ্য পরিবহনে দেরি এবং জ্বালানি খাতে চাপ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এমনিতেই দুর্বল অর্থনীতি, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং রাজনৈতিক দুর্বলতায় জর্জরিত। তার ওপর এক পরমাণু সম্ভাব্য যুদ্ধ গোটা অঞ্চলকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সংঘাত শুধুই সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সীমায় নেই—এটি অনেক বড় ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত বহন করছে। ভারত যদি একতরফাভাবে সন্ত্রাস দমন অভিযানের নামে সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায় এবং পাকিস্তান যদি প্রতিক্রিয়ায় সামরিক উত্তেজনা বাড়ায়, তবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়বে।

তারা আরও বলেন, এই মুহূর্তে পাক-ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শক্তিশালী কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর (যেমন: জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সৌদি আরব) উচিত দ্রুত মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসা। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC)-কে আবার সক্রিয় করে তুলতে হবে, যেন এই অঞ্চলের সমস্যা নিয়ে যৌথভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা যায়।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর পক্ষেও এই উত্তেজনার মধ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে কূটনৈতিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। কারণ যুদ্ধ শুরু হলে শুধু কূটনৈতিক সমস্যাই নয়—মানবিক সংকট, শরণার্থী প্রবাহ, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram