ঢাকা
৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৮:২০
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ৭, ২০২৫

শুল্ক আরোপ নিয়ে নানা দেশে টানাপোড়েন, অটল অবস্থানে ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টারা আমদানির ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের পক্ষে কথা বলেছেন। বাজারে অস্থিরতা এবং বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তারা এই নীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। টেলিভিশনে একাধিক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের পতনকে গুরুত্বহীনভাবে উল্লেখ করেছেন।

অপরদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জোর দিয়ে বলেছেন যে, পরিকল্পনা অনুযায়ী পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর করা হবে। বেসেন্ট বলেছেন, এই অস্থিরতার ফলে মন্দা আসবে এমন কোনো কারণ নেই। এটি একটি সমন্বয় প্রক্রিয়া। এদিকে আরেক শীর্ষ উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট বলেছেন, ৫০ টিরও বেশি দেশ একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শেয়ারের সূচক পাঁচ শতাংশেরও বেশি কমেছে, যেখানে এসএন্ডপি ৫০০ প্রায় ছয় শতাংশ কমেছে। যা ২০২০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের জন্য সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ।

বাজারের এই নাজুক অবস্থা চলতি সপ্তাহেও অব্যাহত থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সৌদি আরবের শেয়ার বাজারে রোববার প্রায় ৭ শতাংশ দরপতন হয়েছে যা করোনা মহামারির পর থেকে এ পর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং জায়ান্ট জেপি মরগান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ।
রোববার সন্ধ্যায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন ইউরোপীয় এবং এশীয় দেশগুলো একটি চুক্তি করার জন্য মরিয়া হয়ে আছে।

পণ্যের দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়া এবং বাজারে মন্দার আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে আমেরিকান ভোক্তাদের ‘সহনসীমা’ নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি মনে করি আপনি খুব বোকার মতো প্রশ্ন করেছেন। আমি চাই না যে কোনো কিছু খারাপের দিকে যাক কিন্তু কখনও কখনও আপনাকে কিছু ঠিক করার জন্য ওষুধ খেতে হয়।

এই অস্থিরতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক রোববার সিবিএস নিউজকে বলেন, সব ধরনের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ ‘বেসলাইন’ শুল্ক সামনের দিনগুলোতে অবশ্যই বহাল থাকবে। লুটনিক আরও বলেন, বেশি হারের পারস্পরিক শুল্ক এখনও পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে।

তালিকায় থাকা প্রায় ৬০টি দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক আগামী ৯ এপ্রিল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এই শুল্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে লুটনিক বলেন, সবকিছুই কার্যকর হবে। তিনি (ট্রাম্প) যা ঘোষণা করেছেন তার সবই বাস্তবায়ন হবে এবং তিনি রসিকতা করে কিছু করেননি।

লুটনিক পেঙ্গুইন অধ্যুষিত দুটি ছোট অ্যান্টার্কটিক দ্বীপের ওপর আরোপিত শুল্কের পক্ষেও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এটি চীনের মতো দেশগুলোর ‘লুপহোল’ বন্ধ করার জন্য আরোপ করা হয়েছে। যাতে তারা এই জায়গাগুলোর মাধ্যমে মালপত্র পাঠাতে না পারে।

এনবিসিতে মিট দ্য প্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ট্রাম্প নিজের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করেছেন। ৫০টিরও বেশি দেশ তাদের শুল্কহীন বাণিজ্যে বাধা কমানোর, শুল্ক কমানোর, মুদ্রার কৃত্রিম হেরফের বন্ধ করার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

ট্রাম্পের আরেক শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেটও দাবি করেছেন যে ৫০টিরও বেশি দেশ আলোচনা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে হ্যাসেট বা বেসেন্ট কেউই কোন দেশগুলো যোগাযোগ করেছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি।

অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া এবং তাইওয়ান গত সপ্তাহে বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ওই দুই দেশ থেকে আমদানির ওপর ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার বিপরীতে প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে না তারা।

সংবাদ সংস্থা এএফপি এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি চিঠি অনুসারে, ভিয়েতনামের নেতা তো লা, ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন, যেন যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামী পণ্য রপ্তানির ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরও অন্তত ৪৫ দিন পর আরোপ করা হয়। এক কথায় তিনি শুল্ক আরোপ বিলম্বিত করতে বলেছেন।

তবে, চীন শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে তারা আগামী ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে সব মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার শনিবার সতর্ক করে বলেছেন যে, পৃথিবীকে আমরা আগে যেভাবে চিনতাম এখন তা বদলে গেছে।

স্টারমার বলেছেন যে, ব্রিটেনের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে যেন কিছু শুল্ক এড়ানো যায়। ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র আরও বলেছেন যে, স্টারমার এবং কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক ফোনালাপে একমত হয়েছেন যে, একটি সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ কারো জন্যই লাভজনক নয়।

এদিকে সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন ডিসিতে বাণিজ্য আলোচনার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে বিমানে ওঠার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু বলেন, নতুন শুল্ক চালু হওয়ার পর তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক নেতা যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করছেন।

তিনি বলেন, এ থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের যেমন ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি দুই দেশের মধ্যেও সম্পর্কও বেশ নিবিড়, যা এই সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে যা জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশব্যাপী সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন শহরে কয়েক লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram