

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পরে তদন্ত কমিটি প্রাথমিক সুপারিশ প্রকাশ করে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন-১ এর সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় প্রশাসনিক ভবনে অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দীর্ঘ সময় আবদ্ধ ছিল।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘বিচার যদি না করিস, দেখব তোরা কত পারিস’,‘রাবি মেডিকেল সংস্কার, এই মুহূর্তে দরকার’,‘প্রশাসনের গাফিলতি আর নয়, সায়মা হত্যার বিচার চাই’,‘আমার বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’,‘পানিতে ডুবে বোন মরে, প্রশাসন কি করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন এখনও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ হাসান সৌরভ বলেন, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছ রাবি। যেখানে প্রশ্ন করলে সবাই বলবে, হ্যাঁ তোমার উত্তর তুমি পাবে। এখনো আমরাও উত্তর জানি না। আমরা খুঁজছি। কিন্তু তারা কবে খুঁজে পাবে এর কোনো সময় সীমা থাকে না। তিন দিন আগে সায়মার মৃত্যুর পর ভিসি স্যারের সাথে কথা হলে তিনি জানান ৩ দিনের মধ্যে সায়মার মৃত্যুর প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। আমরা তার কথায় আস্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরে যায়। তবে তিন দিন পার হয়ে গেলেও কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় নি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের অবহেলার কারণেই আমাদের বোন সায়মা হোসেন মারা গেছেন। আমরা সেদিন রাতেই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন তিন দিনের সময় চেয়েছিল, কিন্তু এখনও প্রতিবেদন দেয়নি। আমরা আশঙ্কা করছি, তারা গড়িমসি করছে। যদি বিলম্ব হয়, রাবির শিক্ষার্থীরা আর চুপ থাকবে না।’
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন তিন দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে রাকসু নিয়মিত প্রেশার দিচ্ছে, সেটি অব্যাহত থাকবে।’
পরে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ প্রকাশ করা হয়।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষদর্শী, মেডিকেল সেন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখনো তদন্ত চূড়ান্ত হয়নি। নতুন যেসব তথ্য আসছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব প্রশিক্ষক দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, তাদের অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সকল হলে ক্রীড়া প্রশিক্ষক নিয়োগেরও সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে উদাসীনতা যেখানে দেখা গেছে, তার সম্ভাব্য সমাধান আমরা সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদসহ কমিটির সদস্য ও প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত রোববার (২৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে নিহত হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইন।

