ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের প্রফেশনাল মাস্টার্সে পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে ভর্তির অভিযোগে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া চেয়ারম্যান ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে স্বপদে বহালের জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চেয়ারম্যানকে স্বপদে পুনর্বহাল না করা হলে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জর ঘোষণা দেন তারা।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিভাগের চেয়ারম্যানকে পুনর্বহাল চেয়ে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবি পেশ করেন। এসময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমদ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন৷
এর আগে বিভাগের চলমান ৫টি ব্যাচ এবং প্রফেশনাল মাস্টার্স ব্যাচের ২ শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর গ্রহণ করেন শিক্ষার্থীরা।
জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন। পরে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীদের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে চেয়ারম্যানকে স্বপদে বহালের দাবি জানালে উপাচার্য বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলে তারা আজকের কতো কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনশী শামস উদ্দিন আহম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের প্রফেশনাল মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাদের ভর্তির কারণে বিভাগের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীবৃন্দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটির কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে আপনাকে ০৫.০২.২০২৫ তারিখ হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হলো। উক্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য শুনে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সংকট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কারা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তা কেউ জানে না। এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে’র জন্যই অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্যের কাছে লিখিত বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো: জাহাঙ্গীর আলমকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক তাঁর পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমরা এই সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি এবং স্যারকে পুনরায় তাঁর পদে পুনর্বহাল করা এবং একাডেমিক কাজে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা সকল ধরণের ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করলাম।
বিভাগের ২০-২১ সেশনের মো. রাহাত রেজওয়ান রুদ্র বলেন, গত বৃহস্পতিবার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের চেয়ারম্যান স্যারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল শিক্ষার্থীর অভিযোগের কারণে স্যারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিভাগের শিক্ষার্থীদের কেউ জানেন না কারা এই অভিযোগ দিয়েছে। আমরা এই অভিযোগকারীদের দেখতে চাই। অন্যদিকে, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম স্যারকে স্বপদে বহাল না করা পর্যন্ত আমরা ক্লাস-পরীক্ষায় বসবো না।
বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী নেওয়াজ শরীফ আরমান বলেন, অভিযোগ করা হয়েছে, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম স্যার ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রলীগ নেতা মিঠুন চন্দ্র শীল নামের একজনকে পরীক্ষা ছাড়াই প্রফেশনাল মাস্টার্সে পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। তার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিলো, সে ডকুমেন্টস ও খাতা বিভাগে রয়েছে। আমাদের বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী এই অভিযোগ দেয়নি। তারমানে কোনো একজন শিক্ষক বা আউটসাইডার যার এতে ব্যক্তিগত লাভ আছে সে এসে স্যারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে ফলে স্যারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভিসি স্যারের কাছে বিষয়টি ক্লিয়ার যে বিভাগের সকল শিক্ষার্থীরা জাহাঙ্গীর আলম স্যারকে আমরা চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই। স্যার জানিয়েছেন সর্বোচ্চ আগামী রবিবারের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, যেহেতু শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ নেই সেহেতু তাকে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে কোনো বাঁধা নেই। আমরা চেষ্টা করবো বিষয়টি খতিয়ে দেখার। সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করা হবে৷