তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এক সময় মানুষের বদ্ধমূল ধারণা ছিল এখানকার মাটিতে কখনই বিদেশি ফলের চাষ সম্ভব নয়। দিন বদলেছে, এখন মরুর অঞ্চলের খেজুরও চাষ হচ্ছে দেশের মাটিতে। স্বপ্ন ও সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে তেঁতুলিয়ার মাটিতেও বিদেশি ফল।
মাল্টাকে এখন আর বিদেশি ফল বলা যাবে না। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন এর চাষ হচ্ছে। উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাতেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মাল্টা। বড় আকারের হলুদ কমলা ও সবুজ মাল্টা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এ অঞ্চলে কমলা-মাল্টা চাষে কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট অবদানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব ফলের বাগান দেখতে আসছেন সাধারণ মানুষ। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় এই রসালো ফল চাষাবাদে দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
কেউ কেউ ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছেন এই মাল্টা চাষে। দেশে সবুজ রঙের মাল্টার চাষাবাদে বাজারে মাল্টার দামও কম। আবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলটিতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। পুষ্টিগুণ ভরা মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে সরকারীভাবে নানা পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। কৃষিবিদরা মনে করছেন, যে হারে মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে আর ফলন দেখা যাচ্ছে তাতে সামনের দিন গুলোতে মাল্টা আমদানি নয় বরং দেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।
আর এই মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা এলাকার ফলচাষি জাফর ইকবাল। তাঁর পাশাপাশি মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আরও অনেকে। চাষিদের মাল্টা চাষের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাল্টা ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অব-উষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় বেশি চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকার মতো এ উপজেলায় মাল্টা চাষ হচ্ছে। সমতল ভূমিতে চায়ের পাশাপাশি মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার প্রায় ২৪ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে মাল্টা। তা সিংহভাগ আবাদ হচ্ছে চা বাগানে। চায়ের পাশাপাশি মাল্টা চাষ কৃষকদের দ্বিগুণ আয়ের সুযোগ তৈরি করেছে।
মাল্টা চাষি জাফর ইকবাল বলেন, ১ একর ৫০ শতক জমিতে গত বছর মাল্টা বিক্রি করেছে প্রায় চার লক্ষ টাকা। এ বছর যে পরিমাণ মাল্টা ধরেছে ৫ লক্ষ টাকার উপরে বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। আর কিছুদিনের মধ্যে মাল্টা তোলা শুরু করবেন। তাজা, বিষমুক্ত ও সুমিষ্ট লেবুজাতীয় এই ফল বিদেশ থেকে আনা মাল্টার সঙ্গে বেশ পাল্লা দিয়েই বিক্রি হয়। ক্রেতা-দোকানির কাছে আমদানি করা হলদে রঙের চেয়ে এ জেলার সবুজ মাল্টার কদর বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ফল রপ্তানি করা হয়। ভালো দাম পাওয়ায় এবং অন্য ফসলের চেয়ে মাল্টা চাষে খরচ কম হওয়ায় দিনদিন ফল চাষে ঝুঁকছেন এখানকার চাষিরা।
স্থানীয়রা বলেন, জাফরের মাল্টা বাগানে গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে রসালো মাল্টা, যা দেখতেই অনেক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিদিন। আগে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু কিছু মাল্টা চাষ হলেও তা দেশে ব্যাপকতা পায়নি। এবার দেশের মাল্টাই বাজারে রাজত্ব করবে। তেঁতুলিয়া উপজেলায় কাজীবাড়ি, বড়বিল্লাহ, তেলিপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, রওশনপুর, বাংলাবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাল্টা চাষ হচ্ছে।
উপ-সহকারী কৃষি র্কমকর্তা মোসাদ্দেকুর রহমান বলেন, জাফর ইকবালের মাল্টার বাগানটি আমি নিজেই তদারকি করছি এবং পরিচর্যার বিষয়ে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। তার বাগানে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করা হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস বলেন, ২৪ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল মাল্টা। এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ এই ফলের চাহিদাও ব্যাপক। তাই উপজেলার অনেক কৃষক মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আমরাও কৃষি বিভাগ থেকে চারা, সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করে চাষিদের পাশে রয়েছি। একসময় এই উপজেলায় মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছি।