ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের মেকানিক আকরামুল ইসলাম সরকারি বরাদ্দের নলকূপ না দিয়ে ভোট চেয়ে মসজিদে ট্যাংকি দান করেছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার তার নিজ ইউনিয়ন মঠবাড়ী ইউনিয়নের জয়দা খানাবাড়ি জামে মসজিদে। এ নিয়ে চলছে এলাকায় তুমুল আলোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতার একটি সরকারি নলকূপ জয়দা খানবাড়ী জামে মসজিদের নামে ইস্যু করা হয়। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমেও যেন পানির অভাব না হয়, সে জন্য এক ঘোড়া সাবমার্সিবল মোটর, পাকা উঁচু ভিটি (চেম্বার), প্ল্যাটফর্ম (কাপড় কাচার স্থান)সহ পানির ট্যাংক নির্মাণের কথা ছিল। তবে এসবের কিছুই পায়নি মসজিদ সংশ্লিষ্টরা।
মসজিদ কমিটি ও মুসল্লীদের অভিযোগ এ বিষয়ে সমাজের মুসল্লীরা কোনো কিছু জানতো-ই না। গত বছরদুই আগে উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের মেকানিক আকরামুল ইসলামের হয়ে সামনের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন জানিয়ে তাকে ভোট দেওয়ার শর্তে একটি পানির ট্যাংক, কয়েকটি পাইপ ও টেপাকল দান করেন বাবুল হোসেন।
গত কয়েক দিন আগে বিষয়টি এলাকার মানুষ জানতে পেরে মসজিদের নামে থাকা বরাদ্দ আত্মসাৎ করে চেয়ারম্যান হওয়ার খায়েশ জন্মানো আকরামকে নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনের সাথে স্থানীয় একটি বাজারে আকরাম তার অনুগত কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বৈঠকে বসেন। পরে ৪০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফাদফা করেছেন বলে মসজিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জনস্বাস্থ্য কার্যালয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে চাকরিতে যোগদানের পর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হঠাৎ শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া আকরামুল ইসলামের রয়েছে কোটি টাকার ফিসারি ব্যবসা। কিনেছেন অর্ধ কোটি টাকার সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে থাকেন জেলা শহর ময়মনসিংহে। ইউপি চেয়ারম্যান হতে তিনি বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় দানখয়রাত করার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের সরকারি বরাদ্দকেও কাজে লাগান ব্যক্তি দান হিসেবে।
আকরামুল ইসলাম ত্রিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পদে মেকানিক হলেও সবাই তাকে এ অফিসের বড় কর্মকর্তা জানতো। সে একই অফিসে চাকুরী করছে এক দশকের বেশী সময় ধরে। সে বিগত আওয়ামী লীগের আমলে চাকুরী নিয়ে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও অফিস প্রধানকে ম্যানেজ করে এ অফিস থেকে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিগত ৫ আগষ্টের পর তার এসব অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই।
নলকূপ বিতরণের তালিকায় থাকা মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে বাবুল হোসেন বলেন, 'বরাদ্দ পেয়েছি। সে(আকরাম) আমার বন্ধু মানুষ, তাই জামানতের জন্য কোনো টাকা নেয়নি। তবে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
জয়দা খানবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মোঃ আবু তাহের এ বিষয়ে বলেন, 'আকরাম আগামীতে চেয়ারম্যানী নির্বাচন করবে, উনি আশাবাদী। এই কথা বলে বছর দুই আগে উনার জন্য ভোট চেয়ে বাবুল ভাই একটা ট্যাংক, কয়েকটি পাইপ ও কল মসজিদে দান করেছিলেন। এখন শুনতেছি মসজিদের নামে সরকারি বরাদ্দ তার(আকরাম) নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে'।
স্থানীয় ইউপি সদস্য পার্শ্ববর্তী সমাজের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, 'সে তো আমার আত্মীয় লাগে। বছর দুই আগে আমাদের মসজিদের সভায়ও আসছিল। তখন আমি কইলাম, যেহেতু আমহে সামনে নির্বাচন করবাইন। তাই একটু সহযোগিতা করলে আমরাও আমহেরে সহযোগিতা করবাম। পরে হে কইল, কোন প্রজেক্ট নাই। এমনেই আমার পকেটতে দশ হাজার টেহা দিলাম, আমহেরা কাজকর্ম করুইন। আমহে আমার আত্নীয় লাগুইন। নির্বাচন যদি করি তাইলে তো আমহের বাড়িত আউন লাগবই।'
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, 'এটা যদি এভাবে বের হয়ে না আসতো, তাহলে তো কেউ জানতই না। এ বিষয়ে তার(আকরামের) আকুতি, এখান থেকে সে ওইভাবে কিছু করে নাই। মসজিদে যে বরাদ্দ ছিল ওইটার ট্যাংকিটা অলরেডি বাবুলের মাধ্যমে চইলা গেছে। বাকী কাজ কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে হবে। আমি বললাম, টেংকিটা যে সরকারি এইটাইতো এলাকার মানুষ জানে না। এ বিষয়ে তার অনুনয়-বিনয় হলো যাতে তার সম্মানের ক্ষতি না করি। মসজিদ-মাদ্রাসা নিয়ে সে যে ঘৃণ্য কাজ করেছে, এটা তো সবাই ধিক্কার দেয়।'
তবে, ভোটে প্রার্থী হওয়া থেকে শুরু করে তার বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আকরামুল ইসলাম বলেন, 'আমি একটু অসুস্থ, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা বলে এড়িয়ে যান। এ প্রতিনিধি তার সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন ব্যবসাই নাই। থাকলে আপনি খুঁজে বের করেন।'
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ছামিউল হক বলেন, '২০২২-২৩ অর্থবছর গেছে আরও আগে। এতোদিন বলেন নাই এখন আমি নতুন জয়েন করেছি, আমি জানিনা। এটা আগের বিষয়, আমাকে আমার আমলের কোন বিষয় থাকলে এগুলো নিয়ে আমাকে জবাবদিহি করবেন।