কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলে অবস্থিত ছয়টি ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ পৃথক “যমুনা উপজেলা” গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ শেষে জেলা প্রশাসকের নিকটে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। রোববার (১৮ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। প্রস্তাবিত যমুনা উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে উপজেলার দাবী জানিয়েছেন মনসুরনগর, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর ও চরগিরিশি ইউনিয়নের লোকজন। এই ইউনিয়নগুলো যমুনা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজিপুর উপজেলার মোট ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি পশ্চিম পাড়ে, বাকি ৬টি পূর্ব পাড়ে। যমুনা নদী মাঝখানে থাকায় পূর্ব পাড়ের মানুষ উপজেলা সদরসহ প্রশাসনিক সেবাগুলো পেতে ভোগান্তিতে পড়েন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যমুনার পশ্চিম পাড়ে উপজেলা সদরের অবস্থান হওয়ায় পূর্ব পাড়ের বাসিন্দাদের নৌকায় নদী পেরিয়ে যেতে হয়। এতে সময়, অর্থ ও জীবনের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে মামলা-মোকদ্দমার মতো কাজ থাকলে একদিন আগেই রওনা হতে হয়। অথচ সরকারি কোনো লঞ্চ বা নৌযান নেই; এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তারা আরও জানান, পূর্ব পাড়ের মানুষের কৃষিজ উৎপাদন বেশি হলেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং ও সরকারি সেবায় রয়েছে বড় ধরনের বৈষম্য। কাজীপুর উপজেলার ১৪টি কলেজের মধ্যে পূর্ব পাড়ে রয়েছে মাত্র ২টি, ১৪টি কারিগরি কলেজের সবকটিই পশ্চিম পাড়ে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই চিত্র—৫৬টির মধ্যে মাত্র ১৪টি পূর্ব পাড়ে। এছাড়া ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৯টি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৪টি হাসপাতালের সবগুলোই পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত।
তাই এই ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন "যমুনা উপজেলা" গঠন করা হলে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটবে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম, সাবেক জনপ্রতিনিধি আবদুল কাদের, কবি আলতাফ হোসেন, সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক সিটির পরিচালক জহুরুল ইসলাম লিটন, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক ফরিদুল হক, প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম ও প্রকৌশলী মো. সুমন মিয়া। এছাড়াও সংহতি জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “এই দাবি সম্পর্কে আমি আগে থেকেই অবগত। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”