স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা: ঘুষ নয়, সুপারিশ নয়—কেবল মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতেই কুমিল্লা চাকরি পেয়েছেন ৭৫ তরুণ-তরুণী। কুমিল্লায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে জেলা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এদের বরণ করে নেয় কুমিল্লা জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন ফলাফল ঘোষণা করেন এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন।
এই ৭৫ জনের মধ্যে ৭০ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী প্রার্থী। সাধারণ কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন ৭২ জন এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩ জন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপার হাছান মোস্তফা, কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চাকরি পাওয়া মুরাদনগরের শাহিন মিয়া এক তরুন বললেন, “কোনো টাকা লাগে নাই, কেউ চায়ও নাই। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ বদলাচ্ছে।”
নিয়োগপ্রাপ্ত আরেকজন নারী প্রার্থী মেঘনা উপজেলার শিমু আক্তার বলেন, “এখন বিশ্বাস হচ্ছে, যোগ্যতা থাকলে সরকারি চাকরি পাওয়া যায়। আমাদের গ্রামে সবাই অবাক!”
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৪, ৫ ও ৬ এপ্রিল কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স মাঠে শুরু হয় নিয়োগ পরীক্ষা। এতে ১ হাজার ৩৫১ জন আবেদন করেন। শারীরিক পরীক্ষার পর নির্বাচিত হন ৬৮৩ জন। তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২৩৯ জন। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন এবং চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন ৭৫ জন প্রার্থী।
স্থানীয়ভাবে অনেকেই এই নিয়োগকে “ঘুষমুক্ত মাইলফলক” হিসেবে দেখছেন। এমনকি, অনেক অভিভাবকও সন্তানের চাকরির খবর পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন।
চাকুরি পাওয়া মাইনুলের পিতা দাউদকান্দির কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, “ছেলের চাকরির জন্য বাড়ি বিক্রি করার কথা ভাবছিলাম। আল্লাহর রহমতে কিছুই লাগেনি, শুধু পরিশ্রম আর প্রার্থনা।”
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, “যারা ঘুষ ছাড়া নিয়োগ পেয়েছেন, তারা দেশ ও জনগণের সেবায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন বলেই বিশ্বাস করি। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি, চাইলে সম্ভব।”
তিনি জানান, ঢাকা পুলিশের হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়।