রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে কিশোর নীরব (১৭) হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আসামী মোঃ কাইয়ুম শেখ (৪৪) কে গ্ৰেফতার করেছে থানা পুলিশ। গ্ৰেফতারকৃত মোঃ কাইয়ুম শেখ কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের ভাগলপুর গ্ৰামের মোঃ জমসেদ আলী শেখের ছেলে।
গত ১২ মে সন্ধ্যায় কালুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ জামাল হোসেন ও তার সঙ্গীয় ফোর্স তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার ঝিটকা বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
কালুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল হোসেন জানান, গত ২০শে মার্চ কিশোর নীরব শেখ তার নিজ বাড়ী কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া গ্রামের মাধবপুর বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে গত ২১ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মোবাইল নম্বর থেকে নীরব শেখের বাবার মোবাইলে ফোন করে নীরব শেখ তাদের কাছে জিম্মি আছে বলে জানায় এবং তাকে ছাড়িয়ে নিতে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে।
পরবর্তীতে মুক্তিপণ দাবীকারীর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর ২দিন পর গত ২৩ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের বাগঝাপা সালেহপুর পদ্মা নদীতে কোমরে লোহার শিকল এবং প্লাষ্টিকের বস্তা বাঁধা অবস্থায় নীরব শেখের অর্ধগলিত লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই দিনই নীরবের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কালুখালী থানায় একটি অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের করে।
এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে একাধিক টিম মাঠে নামে। মামলা তদন্তের একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামী মিজান (২২) কে কালুখালী উপজেলার বাগলপুর গ্রামে তার বসতবাড়ী হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়াও গত ১৯ এপ্রিল হত্যাকান্ডে জড়িত থাকা মুক্তিপণ দাবীকারী আরো এক আসামী নজরুল শেখ (৩৩) কে ঢাকার সাভারের তেঁতুলজড়া ইউনিয়নের জোরপুল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গত ১২মে রাতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আসামী মোঃ কাইয়ুম শেখ (৪৪) কে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার ঝিটকা বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কালুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল হোসেন আরো জানান, গ্ৰেফতারকৃত কাইয়ুম শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় নিরবের বাবা জিহাদ আলী ও কাইয়ুম শেখ একই বংশের লোক। কাইয়ুম শেখ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি ভরাটের ব্যবসা করে। এই বালু ভরাট করা নিয়ে জিহাদ আলী এবং নিহাত আলীর (জিহাদ আলীর ভাই) সাথে কাইয়ুমের ঝামেলা বাধে। এলাকার একটা মসজিদের বালি ভরাটের জন্য সে যতবারই পাইপ বিছাচ্ছিলাম ততবারই নিহাত ও জিহাদ আমার পাইপ ভেঙে ফেলতেছিল। কাইয়ুম ৩ বার পাইপ বিছিয়েছিলো। এইসব ঘটনায় নিহাদ ও জিহাদ আলী কাইয়ুমের ১৬ থেকে ১৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি করে বলে জানায়। যার কারণে কাইয়ুম জিহাদ আলীর ক্ষতি করার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে কাইয়ুম তার চাচাত ভাই মিজানের সাথে জিহাদের ছেলে নীরবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মিজান কাইয়ুমের কথামতো সেই সব কাজ করে দেবে বলে। এরপর গত ২০ মার্চ তারিখ রাত ৮টার দিকে মিজান কাইয়ুমের ফোন করে বলে যে, সে জিহাদের ছেলে নীরবকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেছে। এই খবর পেয়ে কাইয়ুম পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক একটি প্লাস্টিকের সাদা বস্তা নিয়ে নদীর পাড়ে চলে যায়। সেখানে গিয়ে কাইয়ুম দেখে নীরব বসে মোবাইল চালাচ্ছে। মোবাইলটা মিজানের ছিল। তখন কাইয়ুম তার কাছে থাকা গামছা দিয়ে নীরবের গলায় প্যাচ দিয়ে দেয়। গামছার এক পাশ কাইয়ুম এবং অন্য পাশ মিজান টেনে ধরে রাখে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট এভাবে ধরে রাখার পর নীরব মারা যায়। এরপর মিজান প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে এবং অন্য একটি নৌকা থেকে লোহার শিকল নিয়ে এসে লাশের শরীরের সাথে বাঁধে। কাইয়ুম নৌকা চালিয়ে নদীর মাঝে নিয়ে যায় এবং লাশটি নদীর মাঝে নিয়ে ফেলে দেয়।
এরপর ঐ রাতে তারা বাড়িতে ফেরার আগে বাজার থেকে ২টি ঘুমের ঔষুধ কিনে তার একটা কাইয়ুম এবং অন্যটা মিজানকে দেয়। কাইয়ুম ঘুমের ঔষুধ খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। এই মামলায় মিজান ধরা পড়ার পর কাইয়ুম এলাকা ছেড়ে ফরিদপুর চলে যায় এবং সে ফরিদপুরে ৬ দিন থেকে সেখান থেকে ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপনে ছিল।
ওসি (তদন্ত) মোঃ জামাল হোসেন বলেন, এটা আমাদের অনেক বড় একটা সাফল্য। অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো, এই মামলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আসামীকে গ্ৰেফতার করতে পেরেছি। আইনি কার্যক্রম শেষে গ্ৰেফতারকৃত আসামী কাইয়ুম শেখ (৪৪) কে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান ওসি তদন্ত।