আর.কে.বাপ্পা, দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: দেবহাটার নান্দনিক রুপসী ম্যানগ্রোভের ভাঙ্গনরোধে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। রবিবার (১১ মে) সকালে এই সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান।
সূত্র মতে, দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রমণ পিপাসুদের মানসিক প্রশান্তি ও পরিবার পরিজন নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ানোর দিককে সামনে রেখে রূপসী ম্যানগ্রোভকে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে নান্দনিক পিকনিক স্পট রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিবছর বিভিন্ন ছুটিসহ আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে গরম বা শীত এবং বিভিন্ন ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে এ পর্যটন কেন্দ্রটি। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে একটু বিনোদন আর আনন্দ উপভোগের জন্য দর্শনার্থীরা সদলবলে ভিড় জমান এখানে। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রটির কোলঘেঁষে প্রবাহমান ইছামতি নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন বারবার কাছে টানে পর্যটকদের। পড়ন্ত বিকেলে ইছামতির পানিতে অস্তমিত রক্তিম সূর্যের আলোর ঝলকানি, নদীর তীরে প্রিয়জনের সাথে রোমাঞ্চকর কিছু সময় কাটানো, ইচ্ছে হলেই প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে নদীর বুকে নৌকায় ভেসে বেড়ানো, ট্রেইল বেঁয়ে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে ম্যানগ্রোভ বনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো, সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে আবাসস্থলে ফেরা নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলি, আর ভাটির টানে নদীর পানি কমে গেলে ইছামতির বুকে জেগে ওঠা বিস্তৃর্ণ বালুরচরে ছুটে বেড়ানো অনেকটা সমুদ্র সৈকতের মতো অনুভূতির সঞ্চার করে সব বয়সের মানুষের মনে। তাতেই যেন বিমোহিত হয়ে এ পর্যটন কেন্দ্রটির প্রেমে পড়েন দর্শনার্থীরা।
২০১২ পরবর্তী তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডঃ গোলাম মোস্তফা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনম তরিকুল ইসলামের উদ্যোগে সরকারী খাস জমিতে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয় এই রুপসী ম্যানগ্রোভকে। সেজন্য সুন্দরবন থেকে কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী ও গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির চারা এনে এখানে রোপণ করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এসে রুপসী ম্যানগ্রোভকে নতুন নতুন রুপ দেয়ার কাজ করেন। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান যোগদান করে এখানে বিনোদনের জন্য নানারকম ইভেন্ট তৈরি করেন। তিনি এই নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্রটিকে আরো রুপময় ও নৈসর্গিক রুপ দিতে বিভিন্ন নতুন নতুন ইভেন্ট, নতুন করে আবাসিক স্থান, ট্রেইলসহ নানারকম কাজ করেছেন। জেলা শহর থেকে ২৫ কিঃমিঃ দুরের এ পর্যটন কেন্দ্রে ২০ বিঘা জমিতে অনামিকা লেক, শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধু শিশু পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা, সভা-সমাবেশের জন্য কনফারেন্স রুম, ফটোসেশনের জন্য আকর্ষনীয় ও ব্যতিক্রমী একাধিক সেলফি পয়েন্ট, লেকের পানিতে প্যাডেল বোট, কফিশপ, নানা ধরনের কৃত্রিম জীবযন্তু, ঘোড়ার গাড়ি, রাত্রিযাপনের জন্য কটেজ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সীমান্ত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও ইতোমধ্যেই বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি সেখানে পৌঁছেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা নামাজের স্থান, ওয়াশ ব্লক এমনকি দর্শনার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাও এখানে রেখেছে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন।
গত কিছুদিন পূর্ব থেকে এই বিনোদন কেন্দ্রটি ইছামতি নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। যার কারনে সবার মধ্যেই হতাশা জেগে ওঠে। এলাকাবাসী, সংবাদকর্মী ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি বারবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করেন। এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান লিখিতভাবে বিষয়টি জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের জানান। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ও দেবহাটার অনেক সুনাগরিক যারা সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত আছেন তাদের প্রচেষ্টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বরাদ্দ প্রদান করেন। সেই টাকা দিয়ে আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হয়েছে। পরে এখানে স্থায়ী বাধ তথা পাকা ব্লক দিয়ে কাজ করা হবে বলে জানা গেছে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান জেলার মধ্যে এই রুপসী ম্যানগ্রোভটি সকল শ্রেণির মানুষের কাছে আকর্ষনীয় ও অন্যরকম অনুভূতির জায়গা উল্লেখ করে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে আপাতত ৩শত ২০ মিটার জিও ব্যাগ দেয়ার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই কাজ শুরু করা হলো। তারমধ্যে ১শত ২০ মিটার কাজ শুরু হয়েছে আর বাকি কাজ ওয়ার্ক অর্ডার পেলে করা হবে। ইউএনও আরো জানান, তিনি স্থায়ী বাধ নির্মাণের জন্য রুপসী ম্যানগ্রোভ থেকে দেবহাটা থানার পার্শ্ববর্তী এলাকা পর্যন্ত আনুমানিক দেড় কিলোমিটার পাকা ব্লক দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন।