ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে চার বছর আগে মুন্সীগঞ্জের উত্তর ইসলামপুর এলাকায় তিন খুনের মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাসুদ করিম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-রাকিবুল হাসান সৌরভ ওরফে সৌরভ প্রধান, শিহাব প্রধান এবং রনি বেপারী।
রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-শাকিব প্রধান, শামীম প্রধান, অনিক বেপারী, রায়হান এবং জাহাংগীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর। দণ্ডিতদের মধ্যে শিহাব, শাকিব এবং শামীম আপন তিন ভাই।
এদিকে রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
খালাস পাওয়া ১০ জন হলেন-জামাল হোসেন প্রধান, রাহুল হোসেন প্রধান, লিমন হোসেন প্রধান, জাহাংগীর হোসেন, ইমরান হোসেন, রোকন উদৌলা রাফসান ওরফে রাফি, তানবীর মোল্লা রামীম, আরবাজ আহম্মেদ রোহান, পরশ প্রধান এবং আসাদুল্লাহ আল গালিব।
ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মো. বিল্লাল হোসেন সাজার তথ্য নিশ্চিত করেন।
রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিতদের মধ্যে রনি, শামীম এবং শাকিব আদালতে হাজির ছিলেন। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডিত অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, রামিমের বোনকে ইভটিজিং করা নিয়ে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ কেন্দ্র করে আওলাদ হোসেন মিন্টু বাড়ির সামনে উত্তর ইসলামপুর এলাকায় অভি, ইমনসহ অন্যান্যদের নিয়ে শালিসে বসে। তবে শালিসে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। উভয়পক্ষকে আপস করে দেওয়া হয়। তবে এর কিছু সময় পর অভির নেতৃত্বে কয়েকজন ইমন, শাকিব, আলফাজদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় ইমন বাঁশ দিয়ে অভিকে আঘাত করতে গেলে তা গিয়ে লাগে সৌরভের ওপর। সৌরভের সঙ্গে ইমন ও শাকিবের হাতাহাতি হয়।
এ ঘটনায় সৌরভের বাবা জামাল হোসেন আওলাদ হোসেনের কাছে তাৎক্ষণিক বিচার দাবি করেন। পরবর্তী সময়ে রাত ১১টার দিকে আবার সালিশে বসেন তারা। এ সময় জামাল হোসেনের লোকজন আওলাদ হোসেন, তার আফজাল হক, ইমন, শাকিবদের ওপর হামলা করেন। অভি ও সিহাব ইমনকে ছুরিকাঘাত, রনি আওলাদ হোসেনকে এবং সিহাব শাকিববে ছুরিকাঘাত করে।
তাদের ডাক-চিৎকারে লোকজন এলে জামালদের লোকজন পালিয়ে যায়। আহত তিনজনকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমনকে মৃত ঘোষণা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অপর দুজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শাকিব মারা যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওলাদ হোসেন ২৫ মার্চ মারা যান।
এ ঘটনায় ২৬ মার্চ আওলাদ হোসেনের স্ত্রী খালেদা আক্তার মুন্সীগঞ্জ থানায় ১২ জনের নামে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে মুন্সীগঞ্জ সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর আসলাম আলী ২০ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট মামলাটি মুন্সীগঞ্জ আদালত থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। তবে একজন শিশু হওয়ায় তার বিচার মুন্সীগঞ্জ আদালতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এক আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে ১৮ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুহয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।