ঢাকা
৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:১৬
logo
প্রকাশিত : মে ৪, ২০২৫

হাতিয়ায় কৃষি উপ-সহকারীর বিরুদ্ধে প্রণোদনার বীজ আত্মসাতের অভিযোগ

ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: নোয়াখালীর হাতিয়ায় কৃষি উপ-সহকারী মোঃ দাউদের বিরুদ্ধে সরকারি প্রণোদনা বোরো ২০২৪-২৫ মৌসুমে হাইব্রিড ধান বীজ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের জন্য প্রণোদনা সহায়তার হাইব্রিড ধানবীজ বিতরণে সোনাদিয়া ইউনিয়নের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ২৫০ জনের তালিকা থেকে মাত্র ১৫ জনকে দিয়ে বাকি বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। তিনমাস পর এখন ধানকাটা শুরু হলে বোরো হাইব্রিড ধানবীজ আত্মসাতের গোপন তথ্য ফাঁস হতেই বঞ্চিত কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা উপ-সহকারীর দীর্ঘদিনের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার তদন্তপূর্বক শাস্তির দাবি জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বোরো/২০২৪-২৫ মৌসুমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের ধান বীজ আবাদের প্রণোদনা সহায়তার লক্ষ্যে হাতিয়া উপজেলার জন্য ৫ হাজার কেজি হাইব্রিড ধানবীজ বরাদ্দ হয়েছে। জনপ্রতি কৃষকের জন্য ২ কেজি করে মোট দুই হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণের লক্ষ্যে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার অগ্রাধিকার তালিকাও হয়েছিল। হিস্যা হারে সোনাদিয়া ইউনিয়নের ২৫০ জন কৃষকের জন্য ৫০০ কেজি বোরো হাইব্রিড ধানবীজ বরাদ্দ হয়েছে। এ প্রণোদনা আত্মসাতের খবর পেয়ে প্রতিবেদক তালিকার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার সরেজমিন প্রত্যক্ষ করতে যায়। এতে বেরিয়ে আসে সরকারের কৃষি প্রণোদনা আত্মসাতের মূল রহস্য।

কৃষি অফিস যদিও উফশী ধানবীজের তালিকা ওয়েবসাইটে দিয়েছে তবে মূল্যবান এ বোরো/২০২৪-২৫ হাইব্রিডের তালিকা ওয়েবসাইটে দেয়নি তখন। ফলে ভিন্ন আঙ্গিকে অন্তত একটি এলাকার তালিকা সংগ্রহ করে মাঠ অনুসন্ধানে নামতে হয়েছে রিপোর্টারকে।

সংগৃহীত তালিকার ০১ থেকে ১৫ সিরিয়ালের সবাই পূর্ব সোনাদিয়ার পাটনী গ্রামের বাসিন্দা। প্রথম সিরিয়ালের কৃষক আবুল হাসেম বাবলুসহ দশজনকে পাটনী গ্রামের স্থানীয় দোকান এবং তৎসংলগ্ন ফসলি জমিতে ধান কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। বোরো হাইব্রিড সম্পর্কে জানতে চাইলে এরা সবাই একবাক্যে বলে উঠে ১ কেজি করে ২ কেজি ফিগারের কোনো হাইব্রিড ধানবীজ তারা পায়নি। পনের কৃষকের গ্রুপ প্রধান আবুল হাসেম বাবলু জানান, তারা শুধু পাঁচ কেজি ওজনের বোরো ধান এবং সার পেয়েছেন। এছাড়া এ সিজনে আর কোনো কৃষি উপকরণ পাননি তারা। তিনি আরো বলেন, "সোনাদিয়া এলাকার কৃষি উপ-সহকারী মোঃ দাউদ তার মাইজদী বাজারের কীটনাশক ও সারের দোকান থেকে এসব কৃষি সামগ্রী কেনার জন্য প্রায়ই অনুরোধ করেন। "১৩নং ক্রমিকের অনাথ চন্দ্র দাসও একই কথা বলেন।

৭নং ক্রমিকের আব্দুর রহমান বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে মোঃ দাউদ এই এলাকায় থেকে সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ লুটেপুটে খাচ্ছেন। সার, বীজ ও উপকারভোগীদের তালিকা করে পরে তা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। অফিসে নিয়ে মাঝেমধ্যে তাদের থেকে মাস্টার রুল বা বিভিন্ন তালিকায় স্বাক্ষর নিয়ে বিদায় করে দেন।" এসব কৃষকেরা আরো জানান, উপ-সহকারী দাউদ কখনো মাঠে আসেন না। রাস্তায় দেখা হলে বা তাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে হয়।

পাটনীগ্রাম শেষে মধ্য সোনাদিয়া বাংলাবাজার গিয়ে ৩০নং ক্রমিকের মোহাম্মদ হাসানের বাবা আশ্রাফ উদ্দিনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি এবং ৩১নং ক্রমিকসহ তিনজনে স্বীকার করেছেন যে তারা ১ কেজি করে মোট দুই কেজি ধানবীজ পেয়েছেন।

মধ্য সোনাদিয়ার তালিকায় আর যাদের নাম রয়েছে তাদের সাথে সরাসরি এবং মোবাইলে কথা হলে- ১ কেজি প্যাকেটের দুই কেজি কোনো হাইব্রিড ধানবীজ-ই তারা পাননি বলে জানান। এখানকার যে চারজন মুসলিম এবং হিন্দু নারীর নাম তালিকায় রয়েছে তাদের মোবাইল নাম্বার সক্রিয় না থাকায় সাক্ষাৎ কিংবা কথা বলা যায়নি। এভাবে তিনটি ব্লকের পঞ্চাশ জনের সাথে কথা বলে ০৩ জনের প্রাপ্তিস্বীকার পাওয়া গেছে। সে হিসেবে ইউনিয়নটির ২৫০জন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত তালিকা থেকে মাত্র ১৫ জন কৃষক বোরো/২০২৪-২৫ হাইব্রিড ধানবীজ পেয়েছেন। আর ২৩৫ জন কৃষক বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে ৪৭০ কেজি ধানের বাজারমূল্য কেজি প্রতি ৪০০ টাকা হারে মোট এক লাখ ৮৮ হাজার টাকার ধানবীজ আত্মসাৎ করেছেন এই কৃষি উপ-সহকারী।

এছাড়াও, সোনাদিয়া মদিন নগর এলাকার নবীর ট্রাক্টর, তাজউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তান ও ফজল করিমসহ ৮জন কৃষক থেকে স্থানীয় আফসার নামের এক ব্যক্তি আউশ মৌসুমের সার-বীজ দেওয়ার কথা বলে ৪০০ টাকা করে নেন। যাহা উপ-সহকারী মোঃ দাউদের নাম বলেই নিয়েছেন মর্মে উল্লেখ করেন স্থানীরা।

এদিকে, সোনাদিয়া ইউনিয়নে টিসিবি'র পণ্য বিতরণে টেগ অফিসারের দায়িত্ব পালনে অনিয়ম ও অবহেলার কারণে মোঃ দাউদের ওপর স্থানীয় জনসাধারণের অসন্তোষও রয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল চরচেঙ্গা বাজারে পোকা, খাওয়ার অনুপযোগী চাল-ডাল এবং ওজনে কম দেওয়া নিয়ে টেগ অফিসারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি স্থানীয় আব্দুল মান্নান রানাসহ অনেকের ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। এসব অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে স্থানীয় আব্দুল মান্নান জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশ ছাড়া উপ-সহকারী একা কীভাবে প্রণোদনা আত্মসাৎ করেন?

অভিযোগের বিষয়ে কৃষি উপ-সহকারী মোঃ দাউদ জানান, এতোদিন আগের তালিকার বিষয় তার পুরোপুরি মনে নেই। তবে তিনি সবাইকে ধানবীজ দিয়েছেন বলে জানান।

প্রণোদনা বঞ্চিত কৃষকেরা জানান, উপ-সহকারী দাউদ একই উপজেলার(হাতিয়া) তমরোদ্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা। দীর্ঘ ৭ বছর পার্শ্ববর্তী এই ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনে লোভ, অনিয়ম ও উদাসীনতা দেখা দেয়। বিগত সরকারের আমল থেকে এ পর্যন্ত নানান ভাবে তার আর্থিক উন্নতি ঘটে। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি করার আগ্রহও বেড়ে যায় বলে জানান তারা। প্রণোদনা বিতরণে যদি একটি ইউনিয়নে এতো অনিয়ম হয়, তবে বাকি ইউনিয়ন এবং পৌরসভাতে যেন কতো অনিয়ম হয়েছে তার প্রশ্ন রাখলেন এখানকার কৃষি সচেতন মহল।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ জানান, যেহেতু একটা অভিযোগ উঠেছে সেহেতু এটা তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান তিনি।

নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস মোবাইল ফোনে জানান, প্রণোদনার বোরো হাইব্রিড আত্মসাৎসহ এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য বলে দেবো।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram