ঢাকা
৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:০২
logo
প্রকাশিত : মে ২, ২০২৫

ইউএনও’র অনুমতিপত্র জাল করে মায়ানমারে নির্মাণ সামগ্রী পাচার

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত হয়ে পণ্য পাচার বেড়েছে বহুগুণে। আর সেই পাচার উৎসবে এবার কক্মবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতিপত্র জাল করে মায়ানমারে পাচার করা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী বোঝাই একটি ট্রলার।

গেল বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে একটি সিন্ডিকেট টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাবার কথা বলে ট্রলারটিতে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে রওনা হয়। কিন্তু সেটি গন্তব্যে না গিয়ে সরাসরি পৌঁছে মায়ানমারের আরাকান এলাকায়। পাচার করা মালামালের মধ্যে ছিল অনুমতির অতিরিক্ত ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ইউএনও অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য সেন্টমার্টিনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র মেরামতের অনুমতি থাকলেও, সেই অনুমতিপত্রের স্মারক নম্বর এবং পণ্যের পরিমাণ জালিয়াতির মাধ্যমে বদলে ফেলে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। এই পাচার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে নানা জালিয়াতির মাধ্যমে মায়ানমারের খাদ্য পণ্য, কৃষি পণ্য সার, নির্মাণ সামগ্রী পাচার করে আসছে।

পাচারের নেপথ্যে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, ট্রলার মালিক মোহাম্মদ আলম, নারী ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার, জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আসেকুর রহমান, ইউপি সদস্য আকতার কামাল, লাইনম্যান জাহাঙ্গীর আলম, ট্রলার মাঝি নুরুল ইসলাম এবং কেফায়েত উল্লাহ।

জানা গেছে, এই সিন্ডিকেট পূর্বেও একই কৌশলে পাচার চালিয়েছে। সিন্ডিকেটটি গত ১২ নভেম্বর একই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির মাধ্যমে আরও দুইটি ট্রলারে নির্মাণ সামগ্রী পাচার করেছিল। ওই দিন টেকনাফ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে উধাও হওয়া ট্রলার এই দুইটি। যেখানে রড ও সিমেন্ট ছিল।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ায় যেখানে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনের কোনো নির্মাণ সামগ্রী নৌ-রুটে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনওর অনুমতিপত্র সংগ্রহের আইনগত বিধি রয়েছে।

আর সেন্টমার্টিনে রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একটি পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র। জেলা প্রশাসকের নিয়োগ করা কর্মচারী আসেকুর রহমান এই কেন্দ্রটির ইনচার্জ। কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন সেন্টমার্টিনের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত নারী সদস্য মাহফুজা আক্তার।

নারী ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলা প্রশাসনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রটি ভেঙে গেলে মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সম্প্রতি টেকনাফের ইউএনও সেন্টমার্টিনে যান। যেখানে ভেঙে যাওয়া কেন্দ্রটি দেখিয়ে এটি সংস্কারের দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর প্রকল্পের অধীনে পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ওই বরাদ্দের অনুকূলে ইউএনও কেন্দ্রের ইনচার্জ আসেকুর রহমানকে কিছু নির্মাণ সামগ্রী সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সেই অনুমতিপত্রটি সংগ্রহ করেছে প্রতিবেদক। গত ২৮ এপ্রিল ৯টি শর্তে ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন অনুমতিপত্রটি প্রদান করেন। যেখানে ৯ বাইন টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ২০ ব্যাগ সিমেন্ট, ৩০ কার্টুন টাইলস এবং ৩০০ ফুট বালু দ্বীপে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। যার স্মারক নম্বরটি হল : ০৫.২০.২২৯০.০০০.০৯.১৪.২৫.৮১৭। অনুমতিপত্রটি গ্রহণকারী কর্মচারী আসেকুর রহমান ছাড়াও অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার, টেকনাফের ২ বিজিবির অধিনায়ক, কোস্টগার্ডের টেকনাফ/সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার, বিজিবির টেকনাফ বিওপির কোম্পানী কমান্ডার, টেকনাফ থানার ওসি, সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে।

আর সেই অনুমতিপত্রটি জালিয়াতি করে প্রদানের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার টেকনাফের কেরুণতলী ঘাটে মোহাম্মদ আলম নামের সেন্টমার্টিনের এক বাসিন্দার মালিকাধীন একটি ট্রলারে বোঝাই করা হয় নির্মাণ সামগ্রী সমুহ। যেখানে অনুমতিপত্রে উল্লেখ থাকা নির্মাণ সামগ্রীর অতিরিক্ত বোঝাই করা হয়। কেরুণতলী ঘাটের সংশ্লিষ্টদের পাচারকারি সিন্ডিকেটের দেয়া অনুমতিপত্রটি সংগ্রহ করা হয়েছে।

ওই অনুমতি পত্রে দেখা মিলে জালিয়াতির প্রমাণ। যেখানে যার স্মারক নম্বরটির সব ঠিক থাকলেও দুইটি স্থানে করা হয়েছে জালিয়াতি। যার একটি স্মারক নম্বর। ইউএনও কার্যালয় থেকে পাওয়া স্মারকটি সকল নম্বর ঠিক রেখে থেকে দুইটি অংক পরিবর্তন করা হয়েছে। যেখানে ৮১৭ স্থলে রয়েছে ৮১৬। আর সামগ্রীর তালিকায় ৯ বাইন টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টুন টাইলস এবং ৩০০ ফুট বালু পরিবর্তন করা না হলেও সিমেন্ট ২০ ব্যাগের স্থানে ৪০০ ব্যাগ লেখা হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ঘাটের সার্ভিস বোটের লাইনম্যান করিম উল্লাহ জানান, সেন্টমার্টিনের মোহাম্মদ আলমের মালিকাধীন সার্ভিস ট্রলারটি যাত্রী নিয়ে দ্বীপ ঘাট থেকে টেকনাফ যায় ২৮ এপ্রিল বিকালে। ২৯ তারিখ যেখানে ছিল। ৩০ এপ্রিল ওই ট্রলারটি ৯ বাইন টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টুন টাইলস, ৩০০ ফুট বালি এবং ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট বোঝাই করে যাত্রা দেয় দুপুর ১টার পর। স্বাভাবিক নিয়মে ট্রলারটি ২-৩ ঘন্টার মধ্যে দ্বীপে পৌঁছার কথা। কিন্তু ১ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলারটি ঘাটে পৌঁছেনি। খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানা গেছে ট্রলারটি মায়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন অনুমতিপত্রটি জালিয়াতি এবং মায়ানমারে এসব পণ্য পাচারের তথ্য স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ঘটনাটিকে গুরুতর জালিয়াতি ও জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে বিজিবি টেকনাফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজী হননি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram