ঢাকা
৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:৫৭
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২৯, ২০২৫

এক দশকের ভাঙ্গা ব্রীজে দুর্ভোগ

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: ব্রীজের মাঝের অংশ খসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে রড়, দু’পাশের রেলিংগুলো ভেঙ্গে গেছে; নিচের অংশ খসে খসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে রড়। ৫ দশক পূর্বে নির্মিত ব্রীজটিতে এক দশক পূর্বে ভাঙ্গন দেখা দেয়। যতই দিন যাচ্ছে ভাঙ্গনে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে ব্রীজটি। যেকোন মুহুর্তে পুরো ব্রীজটিই খসে পড়ার আশংকাও রয়েছে। এমনই চিত্র ৫ দশকের পুরনো চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার একটি ভাঙ্গা ব্রীজের। উপজেলার ৯ নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর-আবুনগর গ্রামের আবদুস সোবহান সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে ব্রীজটির অবস্থান। প্রতিনিয়ত ভাঙ্গা ব্রীজের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে।

জানা যায়, মিরসরাই উপজেলার ৯ নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর-আবুনগর গ্রামের ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আবদুস সোবহান সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে ব্রীজটি সত্তরের দশকের শুরুর দিকে নির্মাণ করা হয়। গত ২০১৫ সালের দিকে ব্রীজটিতে প্রথম ভাঙ্গন দেখা দেয়। এরপর যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। ব্রীজের উপরের দুইটি অংশে ভেঙ্গে পড়েছে, বেরিয়ে এসেছে রড়। ফাটল ধরেছে পিলারে, দুই পাশের রেলিং অনেকাংশ ভেঙ্গে গেছে; নিচের অংশে খসে খসে পড়ে রড় বেরিয়ে এসেছে। প্রতিদিন এই ব্রীজ দিয়ে সাজেদিয়া নুরানী ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, মিঠাছরা আইডিয়াল স্কুল, মান্দারবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এটি একাডেমী, মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠাছরা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, মান্দারবাড়ীয়া শাহ ওলীয়া বালিকা মাদ্রাসার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী চলাচল করেন। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় জনসাধারণ। যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে প্রাণহানীও। জনপ্রতিনিধিরা নতুন ব্রীজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে আসলেও আজও ব্রীজটি নতুন করে নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। ব্রীজটি দিয়ে আগে তিন চাকার যানবাহন ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও এখন সেই উপায়ও নেই।

সাজেদিয়া নুরানী ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আতা উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তম্মধ্যে আড়াই শতাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই ব্রীজ ব্যবহার করে মাদ্রাসায় আসেন। আমরা এবং অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি।’

শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা নাইমুল হুদা বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলার বড় বাজারগুলোর মধ্যে একটি মিঠাছরা বাজার। এই ব্রীজ হয়ে কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে বাজারে তাদের পণ্য আনা নেওয়া করে থাকেন। বর্তমানে ব্রীজটি দিয়ে হাঁটাও কষ্টসাধ্য। তাই কোন মুমূর্ষু রোগী, ডেলিভারী রোগী যথাসময়ে হাসপাতালে নিতে না পারার কারণে প্রাণহানীর সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।’

সাজেদিয়া নুরানী ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সামির বলেন, ‘প্রতিদিন মাদ্রাসায় ভয়ে ভয়ে যাই আবার ছুটি হলে ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরি। এতবেশি ভয়ের মধ্যে থাকি কোনসময় ব্রীজটি আবার ভেঙ্গে পড়ে।’

ব্যবসায়ী নুর সোবহান বাদশা বলেন, ‘প্রতিনিয়তই এই ব্রীজে মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তাই দ্রুত ব্রীজটি পুণরায় নির্মাণ খুবই জরুরী।’

সিএনজি অটোরিকশা চালক মীর হোসেন বলেন, ‘আমি এই সড়কে নিয়মিত যাত্রী আনা নেওয়া করতাম। ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, যাত্রীদেরও কষ্ট বেড়ে গেছে।’

কৃষক আব্দুল হাই বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর আগে ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়। এরপর আর কোন সংস্কার করা হয়নি। ২০১৫ সালের দিকে ব্রীজটির উপরের অংশ আস্তে আস্তে খসে পড়া শুরু হয়।’তিনি আরো বলেন, ‘ব্রীজটির পূর্ব পাশ পাহাড়ী এলাকা। পাহাড়ী এলাকার পাদদেশের জমিগুলোতে সারা বছর নানা ধরনের শাকসবজি ও ধান চাষাবাদ হয়। ব্রীজ ভেঙ্গে যাওয়ায় আমরা উৎপাদিত শাকসবজি ও ধান বাজারজাত করা নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।’

মিঠাছরা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এই ব্রীজ ব্যবহার করে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। দীর্ঘকাল ধরে এই অবস্থার ফলে আমরাও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভয়ে থাকি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অভিভাবকরাও ভয়ের মধ্যে থাকেন। এই অবস্থা থেকে দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, ‘ব্রীজটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে যখন পুরোপুরিভাবে অচল হয়ে যাচ্ছিল তখন এলাকাবাসীর উদ্যোগে হেঁটে চলাচলের জন্য বারবার কাঠ দিয়ে ব্রীজ পারাপারের ব্যবস্থা করি। কিন্তু কাঠগুলোও কিছুদিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে ভাঙা ব্রীজটি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি এড়াতে সাইকেল থেকে নেমে হেঁটে ভাঙা অংশ পার হতে হয়।’

এলজিইডির মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী রনি সাহা বলেন, ‘ব্রীজটি সম্পর্কে ইতিপূর্বে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। সম্প্রতি আমি ব্রীজটি সম্পর্কে জেনেছি। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ব্রীজটি পুণরায় নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram