গোলাম মাহবুব, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকট নিরসনে চ্যানেল খননে বিআইডব্লিউটিএ’র ব্যর্থতায় কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে চার মাস ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ চেষ্টার পর কোটি টাকা ব্যয় করেও চ্যানেল খননে ব্যর্থ হয়ে খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এই পথে নাব্যতা সংকট দেখিয়ে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফেরি দুটি বন্ধ থাকায় সরকারের লোকসানের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নৌপথের যাত্রীরা।অপরদিকে ফেরি দুটি বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসিকে প্রতিমাসে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউএ)’র উদ্যোগে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বিআইডব্লিউটিসি’র দুটি ফেরিতে পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন প্রকার পরিবহন পারাপার করে আসছে। শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। নিয়মিত চ্যানেল খননের মাধ্যমে নাব্যতা সংকটকে অতিক্রম করে বিআইডব্লিউটিসি নিয়মিতভাবে ফেরিতে পণ্যবাহী গাড়ী পারাপার করে আসছিল। ফলে অতি অল্প সময়ে উত্তরাঞ্চলে পণ্যবাহী পরিবহনের জন্য এই রাস্তাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ফেরি কুঞ্জলতা ও ফেরি কদম নামের দুটি ফেরি এই পথে প্রতিদিন ৩০-৪০টি পণ্যবাহী পরিবহন পারাপার করতো যা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করছিল। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটের কারণে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ২৩ তারিখ থেকে ওই পথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্রহ্মপুত্র নদে ফেরি চলাচলের চ্যানেল খননে বিআইডব্লিউটিএ’র ব্যর্থতায় গত ৪ মাস ধরে চিলমারী-রৌমারী ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করতে বিআইডব্লিউটিএ চ্যানেলের প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকা খননের কাজ শুরু করে। খনন কাজে বিআইডব্লিউটিএ’র ১টি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ৫টি খননযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছিল। কোটি টাকা ব্যয় করে ছয়টি খননযন্ত্র দিয়ে নাব্যতা সংকটের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী তারিখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খননযন্ত্র ৫টি বন্ধ করে দেয় হয়। এরপর রৌমারী ফেরিঘাটের কাছে নৌকার চ্যানেল চালু রাখতে বিআইডব্লিউটিএ’র খননযন্ত্র দিয়ে খনন কাজ চালু রাখা হলেও গত ২৭ মার্চ সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে ফেরি দুটি বন্ধ থাকায় সরকারের লোকসানের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নৌপথের যাত্রীরা। অপরদিকে ফেরি দুটি বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসিকে প্রতিমাসে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী আপেল মিয়া জানান, অনেক দিন থেকে ফেরি বন্ধ থাকায় ট্রাক আসে না। এখানে ট্রাক আসলে ট্রাকের চালক, হেলপারসহ যারা থাকতেন তারা এই ভাতের হোটেল গুলোতেও খাওয়া দাওয়া করতেন। তাদের উদ্দেশ্য করেই এই হোটেলগুলো চলতো। এখন ব্যবসা অনেক কমে গেছে।
ট্রাক চালক আতিক রহমান, ফরিদুল ইসলাম, হিমেল মিয়াসহ অনেকে জানান, সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পাথর নিয়ে এই পথ দিয়ে যাতায়াতে খুব সুবিধা। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় রংপুর হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে, এতে আমাদের সময় এবং জ্বালানী ব্যয় দুটই বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমে গিয়ে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ৫টি ও বিআইডব্লিউটিএ’র ১টি মিলে মোট ৬টি খননযন্ত্র ব্যবহার করে চ্যানেল খননে ব্যর্থ হলে সরকারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস, বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিনিধি দল ও মন্ত্রনালয়ের দল মিলে চিলমারী-রৌমারী নদীপথ পরিদর্শন করে খনন কাজ বন্ধ করার পরামর্শ প্রদান করেছেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের চ্যানেল খনন করে রাখা যাবে না মর্মে সুপারিশ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে চিলমারী ফেরী সার্ভিস বিআইডব্লিউটিসি‘র ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, ব্রহ্মপুত্রের নব্যতার সংকট সৃষ্টি হওয়ায় গত চার মাস ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেরি দু’টি বসে থাকায় এর সাথে সংশ্লিষ্ট ৪০জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও জলযানের স্বাভাবিক ব্যয় মিলে প্রতিমাসে বিআইডব্লিউটিসিকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। চ্যানেল ড্রেজিং করে ঘাটটিকে সচল করার জন্য ঈদের ২দিন আগে আমাদের চেয়ারম্যান বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে ৫ম দফায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, গত ২২ ডিসেম্বর তারিখে রমনা ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরি কদম অনেক কষ্টে ২৩ ডিসেম্বর তারিখে রৌমারী ঘাটে পৌছায়, ওই দিন থেকে ফেরি বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ চ্যানেল খননের কাজ শেষ করে আমাদের জানালেই ফেরি চলাচল শুরু হবে।