বিষ্ণুপদ রায়, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: রাস্তার পার্শ্বে ও খোলা জায়গায় বসে ক্লাস করছেন একদল মানুষ। হাতে বই খাতা বিভিন্ন বয়সের এই নারী-পুরুষরা হচ্ছেন কৃষক কৃষাণী। হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে পুষ্টি উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি ও পরিবেশ বান্ধব চাষ আবাদের নানা উপায়। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই পার্টনার ফিল্ড স্কুলের কার্যক্রম চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে।
উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরলেই চোখে পড়বে গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের এমন ব্যতিক্রমী স্কুল। কৃষি বিভাগের এমন স্কুলের হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে পুষ্টি উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি ও পরিবেশ বান্ধব চাষ আবাদের নানা কলাকৌশল। কৃষক কৃষাণীদের অভিনয়ের মাধ্যমে শেখানো হয় সারের গুনাগুন ও ব্যবহার। ফসলের মাঠের পাশেই কিংবা বাগানের খোলা জায়গায় হয় এই বিদ্যালয়ের ক্লাস। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ফসলের রোগ বলাই দমন উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছেন কৃষক কৃষাণীরা।
প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল এন্ড রুরাল ট্রান্সফার সেশন ফর নিউট্রিকশন এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রকল্পের আওতায় এই পার্টনার ফিল্ড স্কুল পরিচালিত হচ্ছে।
উপজেলার প্রতিটি স্কুলে ২৫ জন কৃষক কৃষণী সপ্তাহে একদিন করে দশটি স্কুলে তিন ঘন্টা করে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। উপজেলার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী বৃন্দ কৃষি স্কুল পরিচালনায় সহযোগিতা করেন।
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পরিচালিত হচ্ছে পার্টনার ফিল্ড স্কুল। ২০২৩ সালে জুলাই মাসে শুরু হওয়া প্রকল্প চলবে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের স্মাট করে তোলা। পুষ্টি উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি ও পরিবেশ বান্ধব চাষ আবাদের নানা উপায় প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ও এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নে বড়বাড়ী, সেনগাঁও ইউনিয়নে হরসুয়া, সৈয়দপুর, বৈরচুরা, ভোমরাদহ, খনগাঁও ইউনিয়ন সহ পৌরসভায় পার্টনার ফিল্ড স্কুল চলমান রয়েছে।
বড়বাড়ী এলাকার কৃষক মন্তাজুল ইসলাম বলেন, এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা রোপা আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ফলে আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করি।
হরসুয়া এলাকার কৃষাণী সিদ্দিকা খাতুন বলেন, আগে আমরা সনাতন পদ্ধতিতে জমিতে সরিষা আবাদ করতাম। এই প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমরা স্মার্ট কৃষকে পরিণত হয়েছি। আমরা এখন কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক ফসলের উৎপাদন করতে সক্ষম হবো।
অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিহার রঞ্জন রায় জানান, পার্টনার প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধীন পার্টনার ফিল্ড স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই স্কুলে ২৫ জন কৃষক কৃষাণী সপ্তাহে একদিন করে দশটি ক্লাশের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান বেগম জানান, কৃষকদের স্মার্ট করতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পার্টনার ফিল্ড স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। ২৫ জন কৃষক কৃষাণীর অংশগ্রহণে প্রতিনিয়ত নতুন-নতুন কলাকৌশলের মাধম্যে নিরাপদ সবজি এবং ধানের বীজ থেকে শুরু করে যে কোন ফসলের বীজ উৎপাদন ও নিরাপদ পদ্ধতিতে কি ভাবে ফসল উৎপাদন করেতে পারে সেই বিষয়ে শেখানো হয়। এই স্কুলে সপ্তাহে একদিন করে দশটি স্টেশনে তিন ঘন্টা করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।