নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ জুটে চলেছেন উপজেলার এক প্রান্ত অন্য প্রান্তে। তার এসব ভাল কাজে উপজেলাবাসী দারুন খুশি হয়েছেন। কি অফিস আওয়ার কি ছুটির দিন। সবসময় যেন তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গত শুক্রবার ১১ এপ্রিল ছুটির দিনে তিনি উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়ন পরিদর্শন করে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন এবং ৮ নং ওয়ার্ড, পাকড়ী গ্রামের আমীর আলী ছেলে মাসুদ রানা মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ।
শুক্রবার সকালে তিনি উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ও আশেপাশের বিভিন্ন ওয়ার্ড সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় এলাকার উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। ইউএনও’র এমন সরাসরি অংশগ্রহণে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশাসনের প্রতি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে।
ওই দিনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি , প্রশাসনের নজরে আসে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও দীর্ঘদিন ধরে গাঁজা সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাকে আইনের আওতায় না এনে ইউএনও তাকে বুঝিয়ে ভালো পথে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। তার ঘরে থাকা ২০টি গাঁজার পুঁড়িয়া স্বেচ্ছায় ধ্বংস করা হয়। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন— ভবিষ্যতে মাদক ছেড়ে দেবেন, নামাজ পড়বেন এবং সৎভাবে জীবনযাপন করবেন।
পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে তাকে একটি মনোহারি দোকান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউএনও। দুই-তিন দিনের মধ্যেই দোকানটি হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ইউএনও মহোদয়ের কাজ আমরা খুব কাছ থেকে দেখছি। শুধু আইন-শৃঙ্খলা নয়, তিনি যে মানবিকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, সেটা সত্যিই অভাবনীয়। এমন একজন কর্মকর্তা থাকলে এলাকায় পরিবর্তন আসবেই। মানুষ ভাল কাজের দিকে ধাবিত।
সিসিবিভিও এনজিও কর্মকর্তা মোঃ নিরাবুল ইসলাম নিরব বলেন, বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার যে ধরনের ভাল ভাল কাজ করছেন সত্যি তিনি প্রশাংসা পাওয়ার দাবীদার। এ ধরণের ভাল কাজ আগামীতে অব্যাহত থাকলে গোদাগাড়ীর মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর সংখ্যা অনেক অংশে হ্রাস পাবে ইনসাল্লাহ।
পুনর্বাসনের সুযোগ পাওয়া ঐ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাসুদ রানা বলেন, “আমি আর মাদক ব্যবসা ও সেবন করবো না। আমাকে একটি ব্যবস্থা করে দেন। আমি যেন ভালোমতো চলতে পারি।”
এ বিষয়ে ইউপেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ বলেন, “প্রশাসনের কাজ শুধু আইন প্রয়োগ নয়, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাও একটি বড় দায়িত্ব। গোদাগাড়ীতে মাদকের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে কাউকে ফিরিয়ে আনা গেলে সেটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।” আগামীতে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনসহ এধরনের কাজ অব্যাহত থাকবে ইনসাল্লাহ।
গোদাগাড়ীর বিভিন্ন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে গোদাগাড়ীকে মাদকমুক্ত করার পথে একধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি তিন শতাধিক গরীব, অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষের মাঝ ইদ উপহার সামগ্রী বিবরণ করেছেন। ইদ উপহার সামগ্রীর মধ্যে চাল, সেমাই, দুধ,চিনি, খেজুর, সয়াবিন তেল, নুডলস, সুগন্ধি সাবান লাক্স, চিপস, পেয়াজ, আলু, শাড়ি, লুঙ্গী উল্লেখযোগ্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাংলোতে মেহমানদের সাথে বিগত ঈদের দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেন এবং ওই দিনই উপজেলা পরিষদ চত্তরে ঈদের নামাজে অংশগ্রহন করতে আসা মুসল্লিদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিষ্টিমুখের আয়োজন করে প্রশাংসায় ভাসছেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী পরীক্ষার্থীর বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক নিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে কিছু খাদ্য সামগ্রী দিয়ে দিয়ে তাদের পড়া লিখার খোঁজ খবর নিয়েছেন। এধরনের ভাল কাজের জন্য শিক্ষক, অভিভাবক দারুণ খুশি।