এএসএম জসিম, পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি: মুগডাল চাষ করে চলতি বছর ব্যাপক সাফল্যের আশা করছেন উপকূলীয় উপজেলা বরগুনার পাথরঘাটার দরিদ্র কৃষকরা। কুষকদের মাঠে মুগডালের চারা ভালো রকমের উঠতে দেখে মনের আনন্দে দিন কাটছে তাদের। অল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে ডাল জাতীয় অর্থকরী এ ফসল চাষ করে সংসারে সচ্ছলতাও ফিরবে বলে আসাবাদী দরিদ্র এলাকাবাসী। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে এ সকল দরিদ্র কুষকরা মুগডাল চাষে আরও বেশি সাফল্য লাভ করবে বলে আশা করছেন এ এলাকার মানুষ।
পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ৬০ ভাগ মুগডাল দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসে। এর মধ্যে বরগুনার পাথরঘাটায় চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ হয়েছে। এখানের ৯৯% জমিতে বারি মুগ-৬, বীনা মুগ-৮ এর আবাদ হচ্ছে। উপকূলীয় বিষখালী ও বলেশ্বর নদীবিধৌত পাথরঘাটা উপজেলার পৌরসভাসহ সকল ইউনিয়নের জমিতে চাষ হয়েছে প্রচুর পরিমাণে মুগডাল। মুগডাল চাষ করতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তাতে চলতি মৌসুমে কৃষকরা তার দ্বিগুণ পরিমাণে লাভবান হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন। এ ডাল চাষে কৃষকদের তেমন একটা পরিশ্রম করতে হয়না। তাছাড়া মাত্র ২ মাসেই এ ডাল ঘরে তোলার কারনে আর্থিক চাহিদা পূরণে সহায়ক বলে জানিয়েছেন।
কৃষক মোতালেব মিয়া, কালাম হোসেন, মনিরসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মাঘ মাসের শেষে এবং ফাল্গুন মাসের প্রথম দিকে মুগডালের আবাদ শুরু করেন তারা। আবার বর্ষার আগেই খেত থেকে মুগডাল ঘরে তুলছেন। রবি মৌসুমে তাঁদের বড় সমস্যা হচ্ছে পানির অভাব। মাঘ মাসের শেষে এবং ফাল্গুন মাসের প্রথম দিকে যদি বৃষ্টি হয় তবে রবি মৌসুমে পতিত জমিগুলো আবাদের জন্য ভালো ভাবে কাজ চাষ করে এর আওতায় আসে এবং ভালো করে গাছ অঙ্কুরিত হয়। ভালো গাছ অঙ্কুরিত হলে সেই গাছ থেকে ভালো ফলন পান বলেন জানান তারা।
তারা আরো জানান, বৈশাখ ও জৈষ্ঠমাসে কালবৈশাখী ঝড় হয়, সেই ঝড়ের পানি নিষ্কাশনের জন্য কোন জায়গা থাকে না। এ এলাকার অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি খাল দখল করে বাধ নির্মাণ করেছেন। এ বাধ গুলো যদি কেটে না দেয়া হয় তবে যতোটুকু কৃষকরা রবি শস্যর দিকে আগিয়ে গেছে আস্তে আস্তে তা কমে যাবে। কারন ওই পানি মাঠে জমে কৃষকের সকল ধরনের ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শওকত হোসেন বলেন, চার থেকে ৫ বছর আগে পাথরঘাটায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে মুগডালের আবাদ হতো, এ থেকে এ বছর ১৩ হাজার হেক্টরে আবাদ হয়েছে। এর পিছনে বেশ কিছু কারন রয়েছে, উচ্চ ফলনশীল জাতের আবিস্কার হয়েছে। যেগুলোর ফলন বেশী ও চাহিদাও বেশী এবং বাজার মূল্যও বেশী। উপকুলের এ অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টির পানি তেমন একটা থাকে না এবং জমিতে হালকা লবনাক্ততার জন্য ধান চাষ করতে পারে না। যে জমিতে ধান কম হয় সেখানে মুগডল ভালো হচ্ছে। এ অঞ্চলে সরকারি প্রনোদনার কারনে কৃষকরা এর প্রতি ঝুকে পড়েছে। এ ছাড়াও উপকুলের অনাবাদী এলাকায় অর্থকরী ফসল মুগডাল চাষের কারনে দরিদ্র চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।