

মো. নজরুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে চলছে প্রায় তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১৩ সালে ৩১শয্যা থেকে ৫০শয্যায় উন্নীত করার দীর্ঘ ১১ বছর পরেও স্বাস্থ্য সেবার কোন উন্নতি ঘটেনি এই হাসপাতালের।
ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় উপজেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামান্য অজুহাতে রোগীদের রেফার করায় তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ২৫০ শয্যার কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল, সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ভৈরবের বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে। এতে রোগীরা হচ্ছেন নানা বিড়ম্বনার শিকার। বিপাকে পড়ছেন হাওরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অসহায় মানুষ। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে জনবল সংকট। ২৮ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজেপত্রে ৫ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও সংযুক্তিতে ২ জন ঢাকায় ও ২ জন কিশোরগঞ্জে কাজ করছেন। এখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১ জন। এছাড়া সহঃ স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ২টি, স্বাস্থ্য সহকারী ৭টি, অফিস সহঃ কাম কম্পিঃ অপারেটর ২টি, ওয়ার্ডবয় ২টি ও পরিচ্ছন্নকর্মীর ৪টি এবং স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সিকিউরিটি গার্ড ও অফিস সহায়কের ১টি করে পদ শূণ্য রয়েছে। এছাড়া মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, কম্পিউটার অপারেটর, হেড এ্যাসিস্টেন্ট, স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ, পরিসংখ্যান বিদ, এ্যাসিস্টেন্ট নার্স, ড্রাইভার, হারবাল এ্যাসিস্টেন্ট (গার্ডেনার), জুনিয়র মেকানিক, বাবুর্চি, মালী ও অফিস সহঃ কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের সকল পদ শূণ্য রয়েছে।
হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পঃ পঃ কর্মকর্তা জরুরী মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। একজন ডাক্তার শত শত রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। মেঝে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। ওয়াশরুমে ময়লাসহ পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ড ও ওয়াশরুম ঠিকমত পরিষ্কার করা হয়না। মশা-মাছির জ্বালায় তারা অতিষ্ঠ। ডাক্তারও ঠিকমতো আসেননা।
সূত্র জানায়, জনবল সংকট থাকায় জরুরী বিভাগ সবসময় থাকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দখলে। আহত রোগীদের সেলাই ও ড্রেসিং তারাই করে থাকেন। একটি দালাল চক্র সাধারণ রোগীদের এখান থেকে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করেন।
জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহ মোঃ মহিবুল্লাহ এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি ডাক্তার নেই, রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল সংকট। আমি একা কোন দিক সামাল দেব বুঝতে পারছিনা। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শীঘ্রই এর সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ সাইফুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানান, কিশোরগঞ্জের প্রতিটি উপজেলাতেই চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে মহাপরিচালকের সাথে কথা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেছেন এই কর্মকর্তা।
.

