অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ঢাকা-বাউফল-পটুয়াখালী যাত্রীবাহী এমভি সুন্দরবন-১৪ লঞ্চে তাস খেলতে বাঁধা ও ভাড়া কম না নেওয়ায় লঞ্চের স্টাফ ও তাবলীগ জামাতের মুসুল্লিদের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের একটি দল হামলা করেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার বগা লঞ্চঘাটে ওই ঘটনা ঘটেছে।
আহতরা হলেন- লঞ্চের সুপারভাইজার মো. ইউনুচ মিয়া (৪৫), সিকিউরিটি কমান্ডার মো. মেজবাহ (৩৬), কেবিন ইনচার্জ মো. বশার (২৭), কেবিন বয় মো. রমজান হোসেন (২৫), লস্কর আ.রহমান (৩২) এবং যাত্রী মো. সুজন (২০), রাতুল (১৭) ও ইশরাফিল।
লঞ্চের স্টাফ, সাধারণ যাত্রী ও ঘাট কর্তৃপক্ষ জানান, রবিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষে মুসুল্লিরা ঢাকা সদরঘাট থেকে সুন্দরবন-১৪ লঞ্চে বাউফলে আসছিলেন। লঞ্চে ইজতেমা থেকে ফেরা বগা ইউনিয়নের ৬ কিশোরও ছিলেন। তারা লঞ্চে রাতভর তাস-জুয়া খেলছিল। এ ঘটনায় তাবলীগের জিম্মাদার মাও. আবদুর রহমানের সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। রাতে টিকিট কাটার সময় মুসল্লিদের অনুরোধে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ৫০০ টাকা ভাড়ার পরিবর্তে ৪৫০ টাকা করে নেন। সোমবার সকালে লঞ্চ বগা ঘাটে পৌঁছানোর আগে ওই কিশোরদের কাছে ভাড়া চাইতে গেলে তারা ভাড়া কম নেওয়ার দাবি তুলেন। তাবলীগের মুসল্লি সেজে সারারাত তাস-জুয়া খেলায় তাদের থেকে ভাড়া কম নিতে অস্বীকৃতি জানায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে লঞ্চের স্টাফ ও ওই কিশোরদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। তাস-জুয়া খেলায় যুক্ত থাকা কিশোররা মনে করছেন তাদের সাথে থাকা মুসল্লিরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে ভাড়া কম নিতে বলেছেন। এ সন্দেহে ওই ৬ কিশোর লঞ্চ স্টাফ ও তাবলীগের মুসুল্লিদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তারা বগা লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় বিষয়টি তাদের বন্ধু-বান্ধবদের জানান। এতে ওই কিশোরগ্যাং গ্রুপের ২৫-৩০ জন সদস্য ঘাটে অবস্থান করেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লঞ্চ বগা ঘাটে নোঙর করলে তারা লঞ্চে উঠে লঞ্চ স্টাফ ও তাবলীগের মুসল্লিদের মারধর করতে থাকে। এসময় পুরো লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক জড়িয়ে পড়ে।
লঞ্চে আসা তাবলীগ জামাতের জিম্মাদার কনকদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মাও.আবদুর রহমান বলেন, ইজতেমা শেষে আমরা ১০জন সাথী বাড়ি ফিরছিলাম। একই লঞ্চে আরও ৬জন কিশোর ইজতেমা থেকে ফিরছিলেন। তারা লঞ্চে তাস-জুয়া খেলতে বসেন। আমরা প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। দ্বিতীয় দফায় ভাড়া কম দেওয়া নিয়ে তারা লঞ্চ স্টাফদের সাথেও ঝগড়া বাঁধায়। এর জেরে ধরে সকালে লঞ্চ ঘাটে ভিরলে তাদের দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের কয়েকজন মুসুল্লি ও লঞ্চ স্টাফদের মারধর করে।
সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের কেরানী এনামুল হক বলেন, যারা তাবলীগের প্রকৃত মুসল্লি, আমরা তাদের ভাড়া কমিয়ে নিয়েছি। কিন্তু কয়েকজন কিশোর ইজতেমা থেকে ফিরছিলেন দাবি করে ভাড়া কমিয়ে নিতে বলেন। তবে তারা সারারাত তাস-জুয়া খেললে আমরা ভাড়া কমিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে দলবল নিয়ে লঞ্চে হামলা চালায়, স্টাফদের মারধর করে।
লঞ্চের সুপারভাইজার ইউনুচ মিয়া বলেন, বিষয়টি আমরা পটুয়াখালী নৌবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমরা বগা ঘাটে লঞ্চ নোঙর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বগা লঞ্চঘাটের ইজারাদার মো. সোহেল বলেন, লঞ্চ ঘাটে আসার সাথে সাথে একদল কিশোর গ্যাং লঞ্চে উঠে স্টাফদের মারধর করে। যারা মারধর করেছেন তারা ঘাটের কেউ না। তারা কিশোরগ্যাং হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. জাকী শাহরিয়া বলেন, ঘটনা শুনেছি। তাস খেলা নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘাটের নিরাপত্তার জন্য বাউফল থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিবেন।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, এখন থেকে ঘাটে অরিতিক্ত পুলিশ মোতায়ন থাকবে। লঞ্চে হামলার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।