ঢাকা
১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:১০
logo
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

বরিশাল অঞ্চলে বেড়েছে ক্যান্সার রোগী সংখ্যা, আক্রান্ত রোগীদের ৫১ ভাগই নারী

জিহাদ রানা, বরিশাল ব্যুরো চীফ: বরিশাল অঞ্চলে ক্যান্সার রোগী বাড়ছে। বরিশাল ও তার আশপাশের ছয় জেলায় এক বছরে নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে চার হাজার ৮০১ জন। বরিশালে ক্যান্সারের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মিত হলেও তা এখনো চালু হয়নি। তবে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে প্রায় পাঁচ হাজার ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নেন। জেলা ও উপজেলা গুলোতে ক্যান্সারের কোনো চিকিৎসাসেবা না থাকায় শেবাচিম হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের একটি রেডিওথেরাপি যন্ত্র থাকলেও তা নষ্ট। তাই রোগীদের ছুটতে হয় ঢাকায়। তবে রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি হাসপাতালে এই সুবিধা থাকলেও সেখানে খরচ কয়েক গুণ বেশি পড়ে।

অবশ্য শেবাচিম হাসপাতালের পাশেই গড়ে উঠছে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল। এই হাসপাতালে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। অনকোলজি, রেডিওথেরাপি, ব্রেকেথেরাপি এবং অনকোসার্জারিও থাকবে। শয্যা সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ৪৬০ বলা হলেও তা কমে আসতে পারে। একই ভবনে কিডনি রোগীও থাকবে। চলতি বছরই এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ফারহানা খান বলেন, আক্রান্ত ক্যান্সার রোগীদের ৫১ ভাগই নারী। নতুন শনাক্ত হওয়া নারী রোগীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার। এ ছাড়া মুখগহ্বর ও গলার ক্যান্সার রয়েছে। আরো আছে জরায়ু ক্যান্সার। শেবাচিম ছাড়া জেলা পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য স্ক্রিনিং পরীক্ষাসহ কোনো ব্যবস্থা নেই। রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহসীন হাওলাদার বলেন, আশপাশের জেলা থেকে রোগীরা এখানে চলে আসে। এখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেই। যদি জেলা পর্যায়ে কিছু চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো, রোগীদের ভোগান্তিও কমে যেতো। এ কারণে প্রতি বছর বরিশালে রোগী বাড়ে। রোগীদের প্রায় ৬০ শতাংশকে রেডিও থেরাপি দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু রেডিওথেরাপি যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় রোগীদের থেরাপি দেওয়া যাচ্ছে না। তাদের ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও অর্থে অভাবে অনেকে যেতে পারে না।

হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক আনম মঈনুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের এক হাজার ৮৬০ জনকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। পদ্মার এ পাড়ের ১১টি জেলার মধ্যে শুধু শেবাচিমে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে এখনো চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা হয়। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা গড়ে উঠলে রোগীদের জন্য ভালো হবে।

তবে ক্যান্সার মোকাবিলায় পিছিয়ে শেবাচিম। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটা দাগে ক্যান্সারের তিন ধরনের চিকিৎসা-কেমোথেরাপি বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা, রেডিওথেরাপি বা বিকিরণ চিকিৎসা অর্থাৎ ক্যান্সার কোষ বিশেষ আলোকরশ্মির মাধ্যমে মেরে ফেলা এবং অস্ত্রোপচার। শেবাচিম হাসপাতালে ২৭ শয্যাবিশিষ্ট একটি ক্যান্সার ইউনিট রয়েছে। সেখানে শুধু রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। জরায়ু ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য একটি বেরাকিথেরাপি যন্ত্র আছে।

শেবাচিম হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০০২ সালে ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা দামের একটি কোভাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপন করা হয়। ১৩ বছর পর ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর সেটি অচল হয়ে পড়ে। এটি সচল থাকাবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগীর থেরাপি দেওয়া হতো। এ ছাড়া নারীদের জরায়ু ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য স্থাপিত যন্ত্রটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

অন্যদিকে রেডিওলজি মেশিন নেই, রেডিও টেলিথেরাপি নষ্ট, ব্রাকিথেরাপি যন্ত্রও অচল পড়ে আছে। তিন বছর আগে ক্যান্সার রোগীদের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় স্থাপন করা হয়েছিল ব্রাকিথেরাপি মেশিনটি। কিন্তু ঠিকাদার মেশিনটি সচল অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় সেটি ওই অবস্থাতেই পড়ে আছে।

হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, জনসংখ্যা অনুপাতে ২০টি রেডিওথেরাপি যন্ত্র প্রয়োজন। কিন্তু তার বিপরীতে আছে একটি, সেটিও বন্ধ। তাই দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র শের ই বাংলা মেডিক্যালে ক্যান্সার চিকিৎসা শুধু ওষুধ নির্ভর। যন্ত্র সচলের জন্য প্রতি মাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হচ্ছে। কিন্তু যন্ত্রটি সচল করা যাচ্ছে না। তাই ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় ৬০ ভাগ রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। কিন্তু রেফারকৃত রোগীদেরও একটা বড় অংশই অর্থনৈতিক কারণে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram