পূর্ব ঘোষণা, নোটিশ ও আনুষ্ঠানিকভাবে না জানিয়ে নওগায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ পেট্রোল পাম্পে উচ্ছেদ অভিযানের অভিযোগে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের পেট্রোল পাম্পগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন। তবে তাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি ছাড়াও মাইকিং করে জানানো হয়েছে। ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক ও বাইক চালকরা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিসট্রিবিউটরস, এজেন্ট এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৮০০ পেট্রোল পাম্পে সকাল ৮ টা থেকে অকটেন পেট্রোল ও ডিজেল উত্তোলন ও সরবরাহ অনির্দিষ্টকালেল জন্য বন্ধ আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধর্মঘটের কারণে সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাইক চালক ও পরিবহন শ্রমিকরা। পেট্রোল পাম্পগুলোতে বাইক, কার, মাইক্রো, পিকআপ, ট্রাক, বাস থামিয়ে ভিড় করছেন চালক ও শ্রমিকরা। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না জ্বালানী। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে অফিসগামীরা পড়েছেন বিপাকে।
রংপুর মহানগরীর শাপলার ইউনিক পেট্রোল পাম্পে গিয়ে ভুক্তভোগী সরকারি কর্মকর্তা মাসুদ রানার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এই পাম্প থেকেই তেল নিয়ে যাতায়াত করি। এখন বাইকেও পেট্রোল নেই। অফিসেও যেতে হবে। ধর্মঘটের বিষয়টা আমার জানা ছিল না। বিপদে পড়লাম। কিভাবে কী করি। পরে তাকে বাইক ঠেলে সামনের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরে বাইক ঠেলে পাম্পে আসতে দেখা আরেকজনকে। তার নাম আব্দুর রহিম। তিনি জানালেন, গ্রান্ড হোটেল মোড়ে এসে বাইকের তেল শেষ হয়েছে। রহমান পাম্পে গিয়ে দেখলাম বন্ধ। শাপলায় এখানে এসেও দেখি বন্ধ। এখন কি করি। একটি এনজিওতে চাকরি করেন তিনি। কথা বলতে বলতেই অফিসের ফোন আসলো তার তার কাছে। খুব বিমর্ষ চাহুনিতে বাইক ঠেলে পাম্প এলাকা ছাড়তে ছাড়তে বললেন, সবাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে।
পিকআপ চালক নাসিম হোসেন জানান, ধর্মঘট ডাকতে গেলে অবশ্যই ২-৩ দিন আগে থেকে অবগত করা উচিত ছিল। কিন্তু এখন কোন নিয়ম-কানুন নাই। যে যখন মন চাচ্ছে ধর্মঘট ডাকতেছে। সরকারকে নরম পাইছে, যে যখন পাচ্ছে তখন সরকারকে টালমাটাল করছে। এট ঠিক না। আজ বুধবার জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রিপ বেশি হওয়া কথা, মার্কেট ভালো। কিন্তু পাম্পে আসলাম তেল নাই। এখন পরিবারকে খাওয়াবো কী।
তবে এই ধর্মঘটের বিষয়ে খুব একটা জানেন না পাম্প কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। রংপুর ইউনিক পাম্পের কর্মকর্তা পরিতোষ চক্রবর্তি জানান, আমি কিছুই জানি না, কেন পাম্প বন্ধ। যেহেতু মহাজন ফোন করে পাম্প বন্ধ রাখতে বলেছে তাই বন্ধ রেখেছি। শুনেছি কোথায় নাকি গন্ডগোল হয়েছে। মারামারি হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটায় এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. মিজান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আ. জলিল জানান, নওগাঁ জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা চিঠি না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। এর প্রতিবাদে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন-বিপণন বন্ধ এবং পরিবহন ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ব্যপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নওগাঁর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দিক জানান, উচ্ছেদ করা হয়েছে সান্তাহারে। ওই এলাকাটি বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের। কিন্তু ভুলকরে নওগাঁ বলা হচ্ছে। আমি যতদূর জানি, নোটিশ মাইকিংসহ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাইওয়ের পাশে উচ্ছেদ অভিযানের নিয়ম মেনে আমরা উচ্ছেদ করেছি। উচ্ছেদ করার আগে গত ২৪ জানুয়ারি পত্রিকায় আমরা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। এরপর সেখানে লাগাতার মাইকিং করা হয়েছে।
সুতরাং, না জানানোর অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল। তিনি বলেন, যেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেখানে সরকারের ৯০ শতক জমি আছে। আমরা সেখানে সবারটা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু ওই পেট্রোল পাম্পের মালিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে তিনি জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে এই ধর্মঘট ডেকেছেন।