সোহেল তালুকদার, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরের ছাইয়া কিত্তা ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাওড়পারের কৃষকরা। বাঁধটিতে প্রতিবছরই এমন ধস দেখা দেয়। স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছাত্রলীগের এক নেতা এই বাঁধের পাশ থেকে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে অবৈধ ভাবে মাটি উত্তোলন করার কারণে প্রতিবছর এমনটি হচ্ছে। অন্যদিকে হাওরের পানি অপরিকল্পতভাবে নামার ফলেও নতুন আরো ৩টি প্রকল্পের ৩টি স্থানে ধস দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলা দেখার হাওরের ছাইয়া কিত্তার বাঁধ ৫৫নং পিআইসি কমিটির অধীনে। দেখার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের পিআইসি নং-৫৫ এর অধীনে ১২২৫ মিটার বাঁধের কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রকল্প এলাকার উত্তর পার্শ্বে ‘ছাইয়া কিত্তা’ নামক জায়গায় গত তিন বছর আগে বর্ষা মৌসুমে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছাত্রলীগের এক নেতা অসাধু ব্যবসায়ী রাতের আধারে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে মহাসিং নদী ও বাঁধের পশ্চিমে বালি মাটি ও ভিট বালি উত্তোলন করে। এতে বাঁধের দুই পাশে মহাসিং নদীর অংশে ও হাওড়ের অংশে বড় বড় দুইটি ডোবার সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ২৭ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে ছাইয়া কিত্তা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। এবার বাঁধের কাজ শুরুর আগেই এই ধস দেখা দিয়েছে। গত ৭-৮ দিন ধরে বাঁধের দুই পাশে বড় বড় ফাটল দিয়ে বাঁধে ধস নামা শুরু হয়েছে। এতে বাঁধের সব মাটি দুই পাশে গভীর ডোবায় ধসে পড়ছে। দেখার হাওরের ছাইয়া কিত্তা ফসল রক্ষা বাঁধের দুই পাশে ভাঙন শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ।
একই সাথে দেখার হাওরের ৪৯, ৫৩ ও ৫৪ নং প্রকল্পেও নতুন করে বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে। এই বাঁধ গুলোর প্রতিটিতে একটি করে বাধের পাশে মহাসিং নদীর তীর ঘেঁশা ডুবা রয়েছে। এই কারণে বাঁধগুলোতে এমনটি হচ্ছে। হাওড়ের পানি অপরিকল্পিত ভাবে প্রতি বছর নেমে যাওয়ার কারণে নদীর তীরে এমন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় বাঁধ গুলোয় ফাটল ও ধ্বস দেখা দিয়েছে। আগে থেকেই বাঁধগুলো রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নিতে পারলে পুরো হাওড়ের বোর ফসল হুমকির মূখে পড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
উপজেলা দেখার হাওরের ছাইয়া কিত্তার বাঁধ ৫৫নং পিআইসি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসাইন নোমান জানান, আমাদের কাজের বাহিরে এই বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে, চলতি বছরের এই অংশে আমাদের তেমন কোন কাজ ধরা ছিলো না। কিন্তু বাঁধটি ফাটল দিয়ে ধ্বসে পড়ার কারণে এখানে নতুন করে আমাদের কাজ করতে হবে। এই জায়গাটি প্রতি বছরই ধ্বসের সৃষ্টি হয়। এখানে বিগত তিন বছর আগে বর্ষা মৌসুমে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছাত্রলীগের এক নেতা অসাধু ব্যবসায়ী রাতের আধারে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে মহাসিং নদী ও বাঁধের পশ্চিমে বালি মাটি ও ভিট বালি উত্তোলন করেছিল। সে সময় এই বাঁধটি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতি বছরই এই বাঁধে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।
এই হাওরের ৪৯ নং পিআইসি কমিটির সভাপতি সফিকুর রহমান জানান, হাওরের পানি অপরিকল্পিত ভাবে নেমে যাওয়ার কারণে আমার প্রকল্পের পাশে নদীর তীরে বড় একটি গর্ত হয়েছে। এখন নদীর পানি কমে যাওয়াই আমার বাঁধের বড় একটি অংশ ফাটল দেখা দিয়ে ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই ফাটল বন্ধ করতে আমাদেরকে অতিরিক্ত বরাদ্ধ সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসারদের সাথে কথা বলেছি, তারা আমাদের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে গেছেন।
এই হাওরের ৫৩ নং প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর মিয়া ও ৫৪ নং প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসেন জানান, আমাদের হাওরে পানি নামার জন্য স্থায়ীভাবে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। অপরিকল্পিত ভাবে পানি নেমে যাওয়ার ফলে আমাদের বাঁধের পাশে নদীর তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই গর্ত গুলোতে গাছের ভল্লি ও জিও ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ এসব স্থানে বাশ, বস্তা বা জিআই ব্যাগের বরাদ্দ দেননি। বাঁধ গুলো রক্ষায় দ্রুত সময়য়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. মমিন মিয়া জানান, দেখার হাওরের ছাইয়া কিত্তা বাঁধটি আসলে হুমকির মুখে এবং ইতিমধ্যে বাঁধটি পরিদর্শন করেছি। এই বাঁধ গুলোতে যে ধ্বস ও ফাটল দেখা দিয়েছে, ইতোমধ্যেই আমরা আবার সার্ভে করেছি। এগুলোতে আমরা গাছের ভল্লি ও জিও ব্যাগ সহ যা যা প্রয়োজন সকল প্রকারের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোন অবহেলার সুযোগ নাই। প্রথম সার্ভে করার সময় এই জায়গা গুলো অক্ষত ছিল, নদীর পানি কমে আশায় নদীর তীরে ধ্বস দেখা দিয়েছে। পুনরায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ গুলো সার্ভে করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করি আমাদের এই সকল বাঁধ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আমার সম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত করতে পারবো।