চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: আওয়ামীলীগ সরকার পতন আন্দোলনে অংশ নিয়ে হামলার শিকার হয়েও আর্থিক সহায়তা বঞ্চিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অন্তর মিয়া। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনে আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এতে তালিকাভূক্ত ৭জনকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হলেও বাদ পড়েছেন আহত ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করা ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
অন্তর মিয়া (৩০) এর বাড়ী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের সবুজপাড়া এলাকায়। একই গ্রামে তিনি তার শশুর বাড়ীতে থেকে স্ত্রী মমতাজ বেগম ও দুই ছেলে মুরছালিন (৪) এবং মাহিম (২) কে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জানা গেছে, ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টের সরকার পতন আন্দোলনে ২আগস্ট উপজেলার সরকারপাড়া মসজিদ থেকে জুম্মার নামাজ বাদ এক দফা দাবিতে একটি মিছিল বের হয়েছিল। মিছিলটি কিছুদুর আসার পর উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় গতিরোধ করে দেন পুলিশ। এরপর সাময়িক সময়ের জন্য মিছিলের অনুমতি মিলে। মিছিলটি কলেজ মোড় এলাকা পেরিয়ে এলএসডি মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় ছাত্রপ্রতিনিধিরা বক্তব্য দেয়ার এক পর্যায়ে আওয়ামী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। আহতদের মধ্যে একজন ছিলেন ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অন্তর মিয়া। ঘটনার পর আহত হলেও প্রাণের ভয়ে হাসপাতালে না গিয়ে তিনি কয়েকদিন বাড়িতে থেকে ওষুধ খেয়ে সুস্থ হন।
সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে ৭জন কে জনপ্রতি ১৫হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হলেও অন্তরের ভাগ্যে তা জোটেনি।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অন্তর মিয়া জানান, আলেমদের ওপর জুলুম নির্যাতনের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নিজে থেকেই অংশ নেন। কিন্তু সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল শেষে বক্তব্য চলার সময় কাঠের লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা করে, মারধরও করে। এসময় আমার ব্যবহৃত চলার লাঠি কেড়ে নিয়ে আমাকেও বেধরক মারধর করে তারা।আহত হয়েও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারিনি তাদের ভয়ে। নিরুপায় হয়ে আমি দুই-তিন দিন অসুস্থ ছিলাম, বাড়ি থেকে বের হতে পারি নাই।
তিনি আরও বলেন, আমি অন্ধ, সব সময় সব খবর জানতে পারি না। সরকার থেকে অনেকেই টাকা সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু আমাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। আমার নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি-বাড়ি কিছু নেই। আমি শ্বশুর বাড়িতে থাকি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিলমারীর ছাত্রপ্রতিনিধি মেহেদী হাসান শান্ত জানান, গণঅভ্যুত্থানে চিলমারী উপজেলায় যারা যারা আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। সেই ভাইদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ তবে সেখানে অন্তরের নাম বাদ পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও'র সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে পরবর্তীতে কোনো ধরনের সহায়তা আসলে ওই অন্ধ ব্যক্তিকে দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া আহদের তালিকা অনুযায়ী ৭জনকে জনপ্রতি ১৫হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে।