মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: শীতের সকালে শহর ও গ্রামের গলিতে গলিতে "লাগবে খেজুরের রস" এমন হাঁক ছেড়ে রস বিক্রি করেন এনামুল। দিন দিন খেজুরের রসের কদর কমে গেলেও বাপ দাদার এই পেশাকে ধরে রেখেছেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই ঘাড়ে করে দুই ঠিলায় রস নিয়ে বিক্রি করেন তিনি।
এনামুল মন্ডল (৪০) বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের পান্নাথপুর গ্রামের মৃত ইদ্রিস মন্ডলের ছেলে। সে এই রস বিক্রি করে দুই সন্তানের মধ্যে মেয়েকে এসএসসি পাশ করায়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সন্তান এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। খেজুরের রস ও তালের রস বিক্রি করে সারাবছর চালান সংসার।
বেলা তখন সাড়ে ১১ টা, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিরামপুর পশু হাটের কাঁচা বাজারে দেখা মিলে এনামুলের। ঘাড়ে ভাঁড় নিয়ে দাঁড়িয়ে ছোট পলিথিনের কাগজে সবজি কিনছেন তিনি। তার আগে ভাঁড়ে রাখা মাটির দুই কলসি ভর্তি খেজুরের রস বিক্রি করেছেন। ভোর বেলায় ভাঁড় ঘাড়ে নিয়ে রস বিক্রি করতে বের হন তিনি। প্রতিদিন ১৫-২০ কিলো রাস্তা পায়ে হেঁটে শহরের ও গ্রামের হাট বাজারের অলিগলিতে বিক্রি করেন রস। প্রতি গ্লাস রস ২০ টাকা এবং প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এই রস বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে দিন শেষে ৫০০ টাকা করে আয় হয় তার।
এনামুল জানান, গ্রামে পাট খেটে খাওয়ার চেয়ে এতে খাটুনি কম। প্রতিদিন খেজুরের ৭-৮টি গাছ কেটে এই রস সংগ্রহ করেন তিনি। গ্রামের প্রায় ১৬ টি গাছ থেকে তিনি এ রস সংগ্রহ করেন। এজন্য গাছের মালিককে দিতে হয় ২ কেজি করে গুড় অথবা কিছু রস।
খাঁটি ও পরিচ্ছন্ন রস সংগ্রহের লক্ষ্যে বিকেলের আগেই গাছের যে অংশ দিয়ে রস পড়ে, সে অংশ চেঁছে হাড়ি ঝুলিয়ে সাথে সাথে নেট দিয়ে ঢেকে দেন। ভোর রাতে গাছ থেকে নামিয়ে সকাল সকাল বিক্রি করেন এ সমস্ত রস। অন্যথায় যত বেলা হতে থাকে রস ততই নষ্ট হতে থাকে। গরম বা সূর্যের আলো বেশি পড়লে, রসগুলো ঝাঁঝালো হয়ে উঠে। তাই বেশি বেলা হওয়ার আগেই রসগুলো বিক্রি করে ফেলেন এনামুল। তার টাটকা খেজুরের রস খেয়ে অনেকেই মুগ্ধ।
এনামুলের রসের হাড়ির কাছে বসে খেজুরের রস খেতে খেতে বিরামপুর আনসার মাঠে সকালে ক্রিকেট খেলতে আসা খায়রুল আলম সবুজ বলেন, খেজুরের রস আমার খুব প্রিয়। আজ ২০টাকা করে ৩ গ্লাস রস খেলাম।
বিরামপুর পৌরশহরের আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি সেই ছোট বেলা থেকে রস বিক্রি করতে দেখে আসছি এনামুলকে। তার রসে কোনো ভেজাল মিশানো থাকে না। ছেলে মেয়েদের নিয়ে বাসায় খেজুরের রসের পিঠা ও খির তৈরির জন্য আমিও ২ কেজি রস নিয়েছি।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, খেজুরের রস একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার। শীতের সময় খেজুরের রস ও রস দিয়ে তৈরি পিঠার সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। এটাকে ধরে রাখতে বাড়ি, স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তার পাশে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি খেজুরের গাছ লাগানো যেতে পারে।