মাজহারুল ইসলাম বিপু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: দেশে শীতের বাহারি সবজি হচ্ছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। সেই কপির মূল্য কমে যাওয়ায় এখন এর কদর কমে গেছে। রংপুর বিভাগের সবচেয়ে বড় সবজির বাজার লালমনিরহাটে। সেই ফুলকপিই এখন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা মণ দরে। এই ফুলকপি ও বাঁধাকপি জেলার চাহিদায মিটিয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানী, বগুড়া সহ বিভিন্ন জেলায়।
খুচরা বাজারে সাধারণত পিস হিসেবে বিক্রি হয়। তবে পাইকারির হিসাব আলাদা। সে হিসাবে লালমনিরহাটের বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি ফুলকপির দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৪ টাকা। এরপরেও অনেক সবজি চাষি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না।
মৌসুমের শেষের দিকে এসে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এর দাম পড়ে গেছে বলে মনে করছেন সবজি চাষিরা। চাষিরা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ ফুলকপির দাম ছিল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। গত এক সপ্তাহে সেই দাম কমতে কমতে এখন ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় এসেছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের সবজি চাষি মকবুল হোসেন জানান, গতকাল বুধবার ভোরে স্থানীয় বাজারে ৮ মণ ফুলকপি নিয়ে এসেছিলেন, সকাল ১১টায় সবগুলো কপি তিনি বিক্রি করেন মাত্র ১ হাজার টাকায়। একই কথা জানালেন আবু বকর সিদ্দিক। এতে তাদের পরিবহন ও হাট খরচ হয়েছে ২৫০ টাকা।
একই এলাকার সবজি চাষিরা আব্দুল বাসেদ বাজারে এনেছিলেন পাঁচ মণ কপি। এই প্রতিবেদকের সামনেই তিনি এক মণ ফুলকপি (জাত ভেদে) বিক্রি করলেন ১২০ ও ১৫০ টাকায়। আরেক সবজি চাষি মাইদুল ইসলাম জানালেন, প্রতি পিস কপি উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। বিক্রি করতে গিয়ে এখন তার দাম পড়ছে ৩ থেকে ৪ টাকারও কম। তারা জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এক মাস আগে যারা কপি তুলে বিক্রি করেছেন তারা প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করেছেন। এখন প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে।
অন্যান্য সবজি চাষিরা জানান, ফুলকপি উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় সারের পেছনে। ডিলাররা সার মজুত করে দাম বাড়িয়ে দেয়। সেখানেই অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। কিন্তু ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি, দুরারকুটি, গোশালা বাজারসড় বিভিন্ন হাটে বাজারে ঘুরে দেখা যায়, ফুলকপির মতো শীতের অন্য সব সবজির দামও কমে এসেছে।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১১৮৩ হেক্টর ফুলকপি, বাঁধাকপি ৭৬৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। সম্ভাব্য ৩৩ হাজার ১২৪ মেট্রিক টন ফুলকপি ও ২২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি সম্ভাব্য উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। কৃষি বিভাগ আরো জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবজির দাম নিচে নেমে এসেছে।