নাসির উদ্দীন বুলবুল, গাজীপুর প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় কারারুদ্ধ যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে টঙ্গীতে শনিবারের মানববন্ধন রূপ নেয় বিশাল সমাবেশে। এতে একপর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, এই মামলায় নূরুল ইসলাম সরকারকে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে আহসান উল্লাহ মাস্টার খুন হলেও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামীলীগ এই হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে।
শনিবার সকাল ১০টায় টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় শুরু হওয়া এ মানববন্ধন বেলা সাড়ে ১২টায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে শেষ হয়। নুরুল ইসলাম সরকার মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির আহমেদের সভাপতিত্বে ও প্রভাষক বশির উদ্দিন ও আব্দুর রহিম খান কালার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি আলহাজ সালাহ উদ্দিন সরকার, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর কারাভোগের পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া বিএনপি নেতা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আইয়ুব আলী, কারারুদ্ধ নুরল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি।
আরো উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন কায়সার, মহানগর বিএনপি নেতা বশির আহমেদ বাচ্চু, হুমায়ুন কবির রাজু, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, ইসমাইল শিকদার বসু, শেখ মো. আলেক, নূর মোহাম্মদ, গাজীপুর মহানগর যুবদলের আহবায়ক সাজেদুল ইসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ভাট, যুবদল নেতা সৌমিক সরকার সহ টঙ্গী ও গাজীপুর মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এ কর্মসূচিতে টঙ্গীর সাধারণ মানুষও স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গী নোয়াগাঁও স্কুল মাঠে স্বোচ্ছাসেবকলীগের এক সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার পর পরই দলীয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন আহসান উল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনায় আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামী করে সাবেক টঙ্গী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের আসামী করা হলেও তৎকালীন যুবদলের কেন্দ্রীয় শ্রম ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের মোট ৫ জনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামী করা হয় বলে বিএনপির অভিযোগ। আহসান উল্লাহ মাস্টার দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দলের জেরে খুন হন মর্মে তখন সরকার একটি প্রেসনোটও জারি করে। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদÐ এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদÐাদেশ ও দু’জনকে খালাস দেন। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। পাশাপাশি আসামিদের পক্ষ থেকে জেল আপিল করা হয়। বাদী পক্ষের কালক্ষেপন ও বার বার অনাস্থায় মোট ৮টি বেঞ্চ পরিবর্তের পর ২০১৬ সালের ১৫ জুন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে। রায়ে ছয় জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয় এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১ জন ও মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ১০ জন মোট ১১ জনকে খালাস এবং সাত জনের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকান্ডের মামলায় নূরুল ইসলাম সরকারকে হুকুমের আসামী করা হলে তিনি উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জালান। উচ্চ আদালতের অন্তবর্তীকালীন জামিন শেষে তিনি নিম্ম আদালতে আত্মসমর্পন করে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। পরে আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। প্রায় ২০ বছর যাবত তিনি এ মামলায় কারাগারে আটক আছেন।