শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে রেলের জমি দখলে চলছে মহোৎসব। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকানঘর সহ বিভিন্ন স্থাপনা। রেল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই নাকি এসব জমি দখল করা হচ্ছে। আবার লিজ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই। এছাড়াও রেলের জমি দখলের এই মহোৎসবে মেতেছেন উপজেলার কিছু প্রভাবশালী।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন, কাওরাইদ, সাতখামাইর, ইজ্জতপুর, রাজেন্দ্রপুর রেলওয়ে স্টেশনের দুই পাশের অংশে স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য খোলা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে এসব জমি। এইসব জায়গায় ঘরে উঠেছে শত শত স্থাপনা। দখলের পর দোকানপাট নির্মাণ করে মোটা অংকের জামানত নিয়ে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে এসব দোকান।
শ্রীপুর বাজারে রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমিগুলো মনগড়া চুক্তি করে বদলানো হচ্ছে মালিকানা। জমিগুলোতে স্থায়ী পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে নেয়ার উৎসবে মেতেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
ইতোমধ্যে অনেক স্থায়ী স্থাপনা দৃশ্যমান হয়েছে। রেল স্টেশন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রেলের জমিতে আধাপাকা ঘর নির্মাণের নামে কৌশলে রড ও সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে পাকা করে স্থায়ীভাবে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় মুনসুরুল ইসলাম মাসুম বলেন, শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশ দিয়ে আগে রেললাইন ছিল। যা এখনো দৃশ্যমান রয়েছে। আর এই রেললাইনের উপর দিয়েই গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকানপাট। এসব দোকান থেকে মোটা অংকের টাকা জামানত নিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের জমিতে গড়ে ওঠা মার্কেটের এক ভাড়াটিয়া জানান, তিনি দোকান নিতে ১০লাখ টাকা জামানত দিয়েছেন এবং মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। তিনি বলেন, ভাড়ার চুক্তিতে লেখা আছে, যে কোন সময় রেলের জমিতে নির্মাণ করা আধাপাকা দোকানগুলো ভাঙ্গা পড়তে পারে। তাই সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় আমার।
রেলের জমি ভোগদখলে থাকা সূত্রে নিজেকে মালিক দাবি করা জসিম উদ্দিন বলেন, প্রথমে রেলের জায়গা দখল করেছি। ১২ বছর আগে লিজ নিয়েছিলাম। পরে আর নবায়ন করা হয়নি। এখন এভাবেই দখলে আছি। রেলের প্রয়োজন হলে নিয়ে নেবে তাতে সমস্যা নাই। আমার পাশেই রয়েছে শ্রীপুর পৌরসভার ড্রাইভার মাইন উদ্দিনের জায়গা। তার এখানে বিশাল একটি ঘর রয়েছে। সেও আমার মত দখলে আছে।
রেল স্টেশন লাগুয়া আলাল নামে এক দোকানির সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা সম্রাটকে ২০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে দোকানটি নিয়েছি। তাকে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।
পাশের দোকানী আমিনুল বলেন, আমি রুস্তম আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে ৩ বছরের জন্য দোকানটি ভাড়া নিয়েছি। প্রতি মাসে তাকে ৪হাজার টাকা দিতে হয়। যেকোনো সময় রেলের অভিযান হতে পারে, তাই আতঙ্কে থাকতে হয়। এছাড়া এই রেল সড়কের পাশে সরকারি জমিগুলো ক্রয় সূত্রেও মালিক দাবি করেন একাধিক ব্যক্তি।
ইব্রাহিম, আ:জলিল সহ আরো কয়েকজন জানান, সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছেন তারা। এখানে অবৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে শ্রীপুরে রেলওয়ের জমি বেদখলমুক্ত ও স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান না থাকায় বন্ধ হয়নি রেলওয়ের জমি দখল। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের ব্যবস্থা নেয়া অতি জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের শ্রীপুর স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, রেলের বেশিরভাগ জমিগুলো মূলত জোর করে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। রেলের জমিতে কেউ লিজ নিলেও স্থায়ী পাকা ভবন করতে পারবেন না। অস্থায়ী স্থাপনা করতে পারবেন। তবে কোনো ব্যক্তি বসবাস ও বাণিজ্যিক কাজ করার জন্য স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন না। তবে লিজ দেয়া জমি থেকে রেল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তাদেরকে সরিয়ে দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ বলেন, রেলওয়ে সারাদেশের অবৈধ দখল জমির বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। খুব দ্রুত রেলওয়ে পক্ষ সারাদেশে জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে। এবং অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।