মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটে শয্যা সংখ্যা রয়েছে ২০টি। তবে শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় ওয়ার্ডে জায়গা পাচ্ছেন না অনেকেই। এতে বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে রোগীদের। অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিমে পড়েছেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ডায়রিয়া ইউনিটে গত অক্টোবর মাস থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। অক্টোবর মাসে ৩৫৯ জন ও নভেম্বর মাসে ৩৫৫ জন রোগী ভর্তি ছিলো। তবে শীতের প্রথম থেকেই এই ইউনিটে রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ডিসেম্বরের শুরু থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় শতাধিক রোগী ভর্তি হন।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ আলপনা আক্তার বলেন, প্রতিদিন গড়ে ২০ জনের মত ডায়রিয়া রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। একজন শিশু রোগীর সঙ্গে কমপক্ষে আরও দুই-তিনজন স্বজন থাকছেন। এতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা সংকুলান হচ্ছে না। শয্যার তুলনায় রোগী বেশী হওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিমে পড়েছেন তারা। শয্যার পাশাপাশি মেঝেতে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে আবার জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী অন্যত্র প্রাইভেট ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন।
এদিকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ৪ বছরের শিশু আকিবের মা শিউলী বেগম বলেন, ঠান্ডা লাগার পাশাপাশি তার সন্তান বমি ও পাতলা পায়খানা করছে। কোনভাবে পাতলা পায়খানা না কমায় হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেন। দুইদিনে তার শিশুর আগের তুলনায় পাতলা পায়খানা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তবে হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের কারণে রোগী ও স্বজনরা অসুস্থ হওয়ারও শংকা করছেন।
কয়েকজন ভর্তি রোগী ও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, ডায়রিয়া ইউনিটের পরিবেশ খুবই নোংরা। তাছাড়া পায়খানাগুলো নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন। এতে করে রোগীর সাথে আসা স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় সকল ঔষধও মিলছেনা। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ঔষধ কিনতে হচ্ছে।
জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এবিএম তৌহিদুজ্জামান জানান, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আলাদা ডায়রিয়া ইউনিটে বিছানা রয়েছে ২০টি। কিন্তু প্রতিদিন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি থাকছে ৩০ থেকে ৪০ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু রোগী। অতিরিক্ত রোগীর চাপে ডায়রিয়ার ইউনিট ছাপিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে সাধারণ ওয়ার্ডের মেঝেতে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পরিবেশও নোংরা হয়ে পড়ছে।
তবে ডায়রিয়া ইউনিটে কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকরা জানায়, তারা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসায় তাদের হিমশিমে পড়তে হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল ঔষধ পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে কলেরা স্যালাইনসহ সিপ্রোসিন জাতের ঔষধের সরবরাহ না থাকায় রোগীরা সেগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, শীতজনিত কারণে শিশু রোগীর চাপ বাড়ছে। ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট ছাড়াও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। মূলত রোটা ভাইরাসের কারণে শীতকালে শিশুরা বেশিরভাগ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর থেকে রেহাই পেতে সচেতনতার পাশাপাশি শীতের সকালে গরম কাপড় পরিধান, ঠান্ডা খাবার না খাওয়ানো ও উষ্ণ স্থানে শিশুদের রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহা উদ্দিন জানান, জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অতিরিক্ত রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে রোগীর চাপ সামলাতে অন্য ওয়ার্ডে ডায়রিয়ার রোগী স্থানান্তর করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।