মো. মাসুদ পারভেজ, বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি: দেশ স্বাধীন হয়ে পার হয়েছে ৫৩ বছর। তবুও মন্ত্রণালয়ের গেজেটে নাম আসেনি ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনে অংশ নেওয়া সম্মুখ সাড়ির সাহসী যোদ্ধা হোসেন ফরাজীর। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে, মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে তালিকায় নিজের নাম দেখতে চান দেশ মাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়া এই মুক্তিযোদ্ধা।
জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে জন্ম গ্রহণ করা হোসেন ফরাজীর বাড়ি বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের উত্তর ডৌয়াতলা গ্রামে। তার পিতার নাম ইয়াসিন ফরাজী। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তার বয়স ৩৪ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অন্যদের সঙ্গে তিনিও পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। বামনার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ছিল ৯ নং পটুয়াখালী সেক্টরের সাব-সেক্টর সদর দপ্তর। এখান থেকেই তিনি যুদ্ধ করেছেন।
হোসেন ফরাজী বলেন, 'কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মাসুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মিজানুর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খানসহ বামনার অনেকেই আমাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চেনেন।'
জীবনের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নির্ধারিত ফরমে সময় মতো আবেদন করতে না পারার কারণে সুফল পাননি তিনি। ইতোমধ্যে শারীরিক নানা জটিলতায় শরীরে বাসা বেঁধেছে অসুখ। দিনদিন হারিয়ে ফেলছেন কথা বলার শক্তিও। জীবন সায়াহ্নে এসে এখনও তিনি কেবলমাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বলেন, 'তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমরা একসাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি।'
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন খান বলেন, 'সে বুকাবুনিয়ায় প্রশিক্ষন গ্রহন করে আমাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। এছাড়াও তিনি হেডকোয়ার্টার বুকাবুনিয়া ক্যাম্পে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানের কাজ করতেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ার যোগ্য।'
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, 'আমরা একসাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। তিনি মুক্তিযোদ্ধার দায়িত্ব পালন করলেও সনদ পাননি এটি দুঃখজনক। আমি তার তালিকাভূক্ত হওয়ার সুপারিশ করছি।'
তার সন্তান ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, আমার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দীর্ঘদিন অনেক লোকের কাছে ঘুরেও কোন কাজ হয়নি। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক সহযোগিতা করছে। আমাদের দাবী বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি যেন দিতে পারি এই আমাদের চাওয়া। গেজেটে যেন তার নামটি প্রকাশ করা হয়।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান জানান, এ ব্যাপারে আমার কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তথ্য পেলে তা যাচাই বাছাই করবো এবং সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রক্রিয়া চালাবো।