ঢাকা
৯ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:০৩
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪

মংডু দখলের পর আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা

কক্সবাজার প্রতিনিধি: লড়াই-সংঘাতের পর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু দখলে নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গেল রোববার মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের সর্বশেষ ৫ নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও দখলে নেয় আরাকান আর্মি।

এদিকে, মংডু আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ ও মায়ানমারে দুই পারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। রাখাইন রাজ্যে এখনও পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে। তাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধ রয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তে টহল জোরদার করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি।

মংডু দখলে নেয়ার পর আরাকান আর্মি নাফ নদীতে নৌ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞার পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকেরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাচ্ছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার জেটিঘাট দিয়ে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পাঁচ দিন ধরে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে খাদ্যসামগ্রীর মজুত কমে গেছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মায়ানমার থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ বা বাংলাদেশে আসতে পাচ্ছে না।

মায়ানমারের মংডুর সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। নাফনদী বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমানা ভাগ করে রেখেছে। রাখাইন রাজ্যের বিপরীতে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ-উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটারে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মি মংডুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সেখানে গোলাগুলি বন্ধ আছে। মর্টার শেল, গ্রেনেড বিস্ফোরণও থেমে গেছে। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হলেও দুই পারের সীমান্তজুড়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এত দিন ওপারের বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেঁপেছিল টেকনাফ সীমান্ত।

এ নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফনদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মায়ানমারের কাউকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মায়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটি’র সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মংডু টাউন রাখাইন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় দুই পারের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। রাজ্যটি শেষ পর্যন্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থেকে গেলে ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন থেমে যাবে। অন্যদিকে, রাখাইন রাজ্যের বসবাসকারী আরও পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হতে পারে। কারণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধ আছে।

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি মংডু দখল করার পর নাফনদীতে নৌ চলাচল বন্ধ রাখতে প্রচারণা চালিয়েছে। নদীতে নামলে তারা গুলি চালাতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর আগেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যাত্রী পারাপারের একাধিক নৌযানে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসা মায়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আরাকান আর্মি এখন রাখাইন রাজ্যের রাজধানী আকিয়াব দখলের চেষ্টা করছে। সিথুয়ে দখল করতে পারলে পুরো রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। তখন বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কোন দিকে গড়ায়, বোঝা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ। কাউকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এহসান উদ্দিন বলেন, ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউন পুরোপুরি দখলে নিয়েছে। একই দিন তারা (এএ) দেশটির জলসীমানায় (নাফ নদীতে) সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে তাঁরাও টেকনাফের নৌযানগুলোকে নাফনদীতে চলাচল করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তবে বিকেলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram