ঢাকা
১২ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৫:০৫
logo
প্রকাশিত : জুন ১১, ২০২৫

আবারও চোখ রাঙাচ্ছে করোনা পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট নেই

দেশে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে মহামারি করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশেও হঠাৎ করোনা বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কিটের মজুতের কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট নেই। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সভাপতিত্বে করোনা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে সম্প্রতি মিটিং হয়েছে। সেখানে দ্রুত কিট সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টা।

এদিকে সতর্কমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার সব স্থল, নৌ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কড়া স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে করোনা ভাইরাসের এক ভয়াবহ রূপ দেখেছিল বিশ্ববাসী। সম্প্রতি সেই মহামারি ফের নতুন রূপে দেখা দিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত গমন না করার পাশাপাশি বাস, ট্রেন ও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নিয়ন্ত্রণে ত্রিমুখী ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এ বছর করোনায় ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। যারা টিকার তিন ডোজ নিয়েছেন তারাও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবেন। এ কারণে করোনা প্রতিরোধে ত্রিমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এখনই। বিমানপথ, নৌপথ, স্থলপথ দিয়ে যারা বিদেশ থেকে আসবেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মোট ৬ হাজার ৪৯১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৬৫ জন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৭৪৭ জন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকার মুখে গত ২২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সভায় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে করোনার টিকা দেওয়ার কথা বলে। সেই চিঠি সরকারের নানা পর্যায়ে পাঠানো হয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) তথ্য অনুযায়ী, তাদের হাতে এখন ৩১ লাখ ফাইজারের তৈরি করোনার টিকা আছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ ফাইজারের টিকা সব জেলায় পাঠানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৬ আগস্ট।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি আছে। কিন্তু কিট নেই। কিট দ্রুত পেয়ে যাব। আর কিট পেয়ে গেলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হবে না।

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা একবার হয়েছে, আর হবে না—এই আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। নতুন ভ্যারিয়েন্টে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। তাই সবার মাস্ক পরতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের ভিড় না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যা যা করার তাই করতে হবে। শুধু মাস্ক পরলে ৯৯ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, যেহেতু করোনা সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়, সেহেতু ঘনবসতি রাজধানী ঢাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ায়। টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেহেতু করোনা দেশে তৃতীয় দফায় ছড়াচ্ছে তাই দ্রুত আক্রান্ত হবে, সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, এখন ইনফ্লুঞ্জা মৌসুম। এই হাঁচি-কাশির মধ্যে কে করোনা রোগী তা বোঝা যাবে না। জনসমাগম এলাকায় ছড়াতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীরা সব ঢাকায় এসে পড়ে। এই ব্যবস্থাপনা যেন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে থাকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অক্সিজেন ও আইসিইউয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সব রোগী ঢাকায় এলে চিকিৎসায় বড় ঘাটতি দেখা দেবে। কেউ চিকিৎসা পাবে, আবার কেউ পাবে না। বিনা চিকিৎসায় অনেক রোগী মারা যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান জনবল দিয়ে করোনার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব না। রোগ হওয়ার আগেই ব্যবস্থাপনা জরুরি। সরকারকে এখনই বহুমুখী ব্যবস্থাপনা নিতে হবে। স্থল ও বিমানবন্দরে ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদের পরীক্ষা করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী নয়, আসলে যাদের করোনার টিকা নেওয়ার মেয়াদ ছয় মাস পার হয়ে গেছে, তাদেরও টিকা নিতে হবে। আর সেই উদ্যোগ যদি নিতে হয় তবে এখন যে টিকা আছে, তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। সরকার ইচ্ছা করলে এ নিয়ে ডব্লিউএইচও বা অন্য দাতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ ও এনবি ১.৮.১- এর সংক্রমণ বিভিন্ন দেশে বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে যারা দেশের মাটিতে পা রাখছেন তাদেরও করা হচ্ছে স্ক্রিনিং। তবে বিদেশফেরত যাত্রীদের মধ্যে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ দেখা যায়। তারা বলেন, ঝুঁকি এড়াতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা আরও সচেষ্ট হওয়া উচিত।

করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট রোধে করণীয় :ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। তাই সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কবার্তা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আসুন জেনে নিই নির্দেশনাসমূহ সম্পর্কে। দেশের বিভিন্ন স্থল বা নৌ বা বিমানবন্দরগুলোতে আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করা। দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিসমূহে থার্মাল স্কান্যার বা ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করা। চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুত রাখা (পিপিই)। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনাগুলো প্রচার করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা।

সবার জন্য সাধারণ পরামর্শ: ১. কয়েক বার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত ২৩ সেকেন্ড)। ২. নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা। ৩. আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে। ৪. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। ৫. হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন।

সন্দেহভাজনদের ক্ষেত্রে করণীয় :অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন। মারাত্মক অসুস্থ হলে কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন। প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন (০১৪০১-১৯৬২৯৩) নম্বরে যোগাযোগ করুন।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram