জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা ছিল। অবশেষে সরে যেতেই হলো পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে। সম্মানজনক বিদায়ের উপায় হিসেবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে যাচ্ছেন তিনি। বিদায়টি ‘অস্বাভাবিক’ হলেও যেন সেটি ‘অসম্মানজনক’ না হয়, সেই দাবি ছিল জসীম উদ্দিনের।
সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আপাতত জসীম মাসখানেক ছুটিতে থাকবেন। সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র সচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও পেশাগত কূটনীতিক হিসেবে তার কর্ম দক্ষতাকে কাজে লাগানো যায় কিনা সেই চিন্তা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। তারই অংশ হিসেবে জসীম উদ্দিনকে উত্তর আমেরিকায় রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনেকটা চূড়ান্ত করেছে সরকার।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলানোর জন্য অন্তর্বর্তী দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. নজরুল ইসলামকে। পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব (নতুন নিয়োগ) যোগদানের আগ পর্যন্ত ড. ইসলাম রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। দেশের ২৮তম পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগের ফাইলেও প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে সূত্র জানায়, দায়িত্ব নেওয়ার আট মাসের মাথায় পররাষ্ট্র সচিবের অস্বাভাবিক বিদায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অস্থিরতাসহ সার্বিক বিষয়ে আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। চলতি মাসের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র সচিব পদে রদবদল বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মৌখিক নির্দেশনা আসে। যার প্রভাব পড়ে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ তথা সম্পর্কে। অন্তর্বর্তী সরকারের আচমকা এমন সিদ্ধান্ত স্বভাবতই ব্যথিত করে জসীম উদ্দিনকে। পেশাগত জীবনের একেবারে শেষলগ্নে থাকা জসীম উদ্দিন বিষয়টির ‘সম্মানজনক’ সুরাহা চান। এমনকি তিনি অংশ নেননি জাপানের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও। উল্লেখ্য, আগামী ২৮ মে জাপান সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হাই প্রোফাইল ওই সফরের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা ও দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয় নিয়ে গত ১৫ মে টোকিওতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক (ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি) হয়। ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের। পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের বদলে সেই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামকে পাঠানো হয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয়বার পররাষ্ট্র সচিব পদে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল। বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন গত বছরের সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র সচিব পদে যোগ দেন। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে তার অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা। প্রসঙ্গত, গত পাঁচ দশকে পররাষ্ট্র সচিব পদে নিয়োগের এক বছর কিংবা তার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে কাউকে সরিয়ে দেওয়ার নজির মাত্র তিনটি। তাদের মধ্যে ১৯৭২ সালে নিয়োগের ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয় পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ আনোয়ারুল করিমকে। ১৯৮৯ সালে একেএইচ মোরশেদকে সরানো হয় চার মাসের মাথায়। আর ২০০১ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে পাঁচ মাসের মাথায় সরিয়ে দেওয়া হয়।