পণ্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি কমে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিওপির ঘাটতি নেমে এসেছে ৬৬ কোটি ডলারে, যেখানে এক মাস আগেও এই ঘাটতি ছিল ১০৭কোটি ডলার।
গত বছরের একই সময় এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল আরও অনেক বেশি ৫৫৭ কোটি ডলার। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৮২২ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের এই সময়ে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪২২ কোটি ডলার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী গত ২৯ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার ডলার।
গত বছর একই সময়ে বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৮৭২ কোটি ডলার। তার মানে, এক বছরে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বেড়েছে ১৮৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩ হাজার ৬৫৭কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৬১ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়। তার আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) ঘাটতি ছিল আরও বেশি, ১ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। অবশ্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে ১৩৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি কিছুটা বাড়লেও পণ্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে ঘাটতি কমে এসেছে।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর উদ্বৃত্ত ছিল ৬৮৯ কোটি ডলার। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর আর্থিক হিসাব ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়। যদিও ১০ মাস শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত আছে ১৯৬ কোটি ডলার।
দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার-সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।