বাংলাদেশ লালমনিরহাটে বিমানবন্দর চালু করলে ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নেবে ভারত। লালমনিরহাটে বিমানবন্দর চালু করার ঘোষণার পর ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহরের পুরোনো একটি বিমানবন্দর সংস্কারের কাজ শুরু করেছে দেশটি। এটি বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হলেও ধারণা করা হচ্ছে- যুদ্ধকালীন সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমানগুলোর উড্ডয়ন, অবতরণ এবং জ্বালানি ভরার সুযোগ করে দেয়ার সুবিধাযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিশেষ এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, চীনের সহযোগীতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার লালমনিরহাটে অবস্থিত একটি বিমান ঘাঁটি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। যেটি রংপুর বিভাগে অবস্থিত।
যা ভারতীয় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কাছে উদ্বেগের বার্তা দিয়েছে। তারা মনে করছে, লালমনিরহাটের বিমান ঘাঁটিটি পুনরায় সক্রিয় করার ফলে আক্ষরিক অর্থেই দিল্লির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে বেইজিং। কেননা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ওই বিমান ঘাঁটির দুরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। এছাড়া শিলিগুড়ি করিডোর থেকেও লালমনিরহাটের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। যেটি মাত্র ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত ভূমি নিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই করিডোরটি চিকেন নেক নামেও পরিচিত। যার পশ্চিমে নেপাল এবং উত্তরে ভূটানের সীমান্ত রয়েছে। এ দুদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থিতিশীল। এছাড়া ২০১৮ সালে বিলুপ্ত ২৪০ বছরের পুরনো হিন্দু রাজতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে নেপালের জনগণ। তবে ওই করিডোরের দক্ষিণ সীমান্তে লাল সংকেত ঝুলছে।
যদি চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিমান ঘাঁটিটি পুনরায় সচল করে তাহলে সেখানে চীন তাদের সামরিক সরঞ্জাম- যুদ্ধবিমান, রাডার ও নজরদারির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন কিছু রাখতে পারে বলে ভারতের শঙ্কা। এই উদ্বেগের কারণে ভারত উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহরে তিন দশকের পুরনো একটি বেসামরিক বিমানবন্দরের সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এনডিটিভি বলছে, এটি সম্ভবত বেসামরিক ব্যবহারের জন্যই থাকবে, তবে উত্তর-পূর্বের অন্যান্য প্রধান বিমানবন্দরের মতো, যুদ্ধের সময় বা জরুরি পরিস্থিতিতে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান এবং বিমানগুলিকে উড্ডয়ন, অবতরণ এবং জ্বালানি ভরার সুযোগ করে দেয়ার সুবিধাযোগ্য করে তোলা হবে। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনে ভারত যে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারিয়েছে সে বিষয়টিকেও মাথায় রেখে নতুন করে ওই বিমানবন্দরটি চালু করতে চাইছে ভারত। কেননা ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে চীনের উপস্থিতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে ছিলেন হাসিনা। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে তার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সেটি ভারতের প্রতি ‘কম বন্ধুত্বপূর্ণ’। এসব বিষয় মাথায় রেখে লালমনিরহাটে পুনরায় বিমানবন্দর চালু করার বিষয়টি উদ্বেগের সঙ্গে নিয়েছে দিল্লি।