ঢাকা
২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৪:৫৮
logo
প্রকাশিত : মে ২০, ২০২৫

কোরবানির চামড়া সংগ্রহে গরম নিয়ে দুশ্চিন্তা

আসন্ন কোরবানিতে চট্টগ্রামে প্রায় চার লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেটের কথা জানিয়েছেন এ শিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীরা। ঈদুল আজহার সপ্তাহ দুয়েক বাকি থাকলেও এখনো সরকারিভাবে কোনো আগাম প্রস্তুতি নেই। কিছুই জানেন না জেলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার গরম আবহাওয়া চামড়া সংগ্রহে বাধা হতে পারে।

গত কয়েক বছরে কোরবানিতে রপ্তানিপণ্য হওয়ায় চাহিদা থাকলেও অনেকটা ফেলনা পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে পশুর চামড়া। লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম মেলে না দুইশ টাকাও। কোরবানির পশু হিসেবে জবাই করা গরু, মহিষ কিংবা ছাগলের চামড়া চট্টগ্রামের অনেক কোরবানিদাতাই বিনামূল্যে দান করেন ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। দাম কম হওয়ায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণেও আগ্রহ কমেছে ব্যবসায়ীদের। দেশের অন্য এলাকার চিত্রও কমবেশি একই বলে জানা যায়।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির তথ্য বলছে, বর্তমানে এক তৃতীয়াংশে নেমেছে নিবন্ধিত চামড়া আড়তদারের সংখ্যা।

লবণ দিয়ে সময়মতো সংরক্ষণ করা না গেলে কাঁচা চামড়া পচে নষ্ট হয়ে যায়। এবার আবহাওয়া গরম। গরম হওয়ায় চামড়ায় দ্রুত পচন ধরবে। এজন্য এবার দ্রুত লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।-বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন

কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির পুরো টাকাই কোরবানিদাতারা হতদরিদ্র মানুষদের দান করেন। পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য না মেলায় সমাজের ওই শ্রেণির মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরেই কোরবানি পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব না হলেও আসন্ন ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা দেখছি মানুষ কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের হতদরিদ্র মানুষ, যারা এই চামড়া বিক্রির টাকার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই অব্যবস্থাপনার অবসান হওয়া প্রয়োজন।

চট্টগ্রামে কোরবানিতে পশুর চামড়া সংরক্ষণের বড় স্থান নগরীর আতুরার ডিপো এলাকা। এখানে ৪০-৫০টির মতো স্থায়ী ও অস্থায়ী গুদামে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা হয়। চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আতুরার ডিপো এলাকায় আকারভেদে গড়ে দুইশ থেকে চারশ টাকায় প্রতিটি গরু-মহিষের চামড়া কেনেন আড়তদাররা। কোরবানিতে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা গ্রামপর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করে নগরীর আতুরার ডিপোতে নিয়ে আসেন।

চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জানান, আতুরার ডিপো বাদেও নগরীর চাক্তাই, বাকলিয়া, মাঝিরঘাট, হালিশহর, পতেঙ্গা, নাছিরাবাদ শিল্প এলাকা, সাগরিকা শিল্প এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া লবণজাত করেন। সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে তারা এসব চামড়া কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করেন।

নগরীর বাইরেও উপজেলা পর্যায়ে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী শামিয়ানা তৈরি করে চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন। ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করে চামড়া নিয়ে আসেন আতুরার ডিপো এলাকায়।

আমি কিছুই জানি না। মন্ত্রণালয় থেকেও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তাই কোরবানির চামড়ার বিষয় নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।- চা বোর্ডের সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের সমিতির সদস্য ১২২ জন। এর মধ্যে ৪০-৫০ জনের মতো এখন ব্যবসায় রয়েছেন। চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে দিন দিন এ ব্যবসায় ভাটা পড়ছে। তারপরেও কোরবানিতে আমরা যথেষ্ট সোচ্চার থাকি, যাতে চামড়া সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে না যায়।’

তিনি বলেন, ‘লবণ দিয়ে সময়মতো সংরক্ষণ করা না গেলে কাঁচা চামড়া পচে নষ্ট হয়ে যায়। এবার আবহাওয়া গরম। গরম হওয়ায় চামড়ায় দ্রুত পচন ধরবে। এজন্য এবার দ্রুত লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।’

কোরবানিতে এবার চট্টগ্রামে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হবে বলে জানান এ ব্যবসায়ী। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো প্রয়োজন পড়বে ব্যবসায়ীদের। অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সরকারি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘এবার গরু-মহিষের তিন লাখ পিস এবং এক লাখের মতো ছাগলের চামড়া যদি সংগ্রহ করা হয়, তাতে শুধু চামড়ার জন্য সাড়ে ১২ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। গরু-মহিষের একটি চামড়া গড়ে ৪শ টাকা করে ১২ কোটি টাকা, ছাগলের চামড়া গড়ে ৫০ টাকা করে ৫০ লাখ টাকা, সঙ্গে লবণ, শ্রমিকের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলে ২০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। গত বছর সবমিলিয়ে পুরো চট্টগ্রামে তিন লাখ ৭০ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল।’

ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা মাঠে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চামড়া সংরক্ষণ করে। ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, ‘আমি এবার নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। গত বছর ১৫-২০ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এবার তার চেয়ে কিছু বেশি চামড়া আমরা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেবো। আমরা চামড়া ব্যবস্থা নিয়ে সংগঠনের মিটিং ডেকেছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর সরকারিভাবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবার এখনো দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। চামড়ার ন্যায্য দাম নিয়ে এবার শঙ্কা রয়েছে।’

এদিকে গত ৪ মে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার পর বাণিজ্য উপদেষ্টাকে আহ্বায়ক করে উচ্চ পর্যায়ের ‘কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটি’ গঠন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিয়ে কোনো কার্যক্রম, নির্দেশনা চোখে পড়েনি।

গত বছর চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের প্রধান ছিলেন চা বোর্ডের তৎকালীন সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী। তিনি বর্তমানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে চট্টগ্রামে নিয়োজিত। এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিভাগীয় কমিশনার অফিসে এখন পদায়িত। আমার স্থলে চা বোর্ডে এখন তিবরীজি (ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি) আছেন। এবার চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবস্থাপনা নিয়ে উনিই কথা বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে কথা হলে চা বোর্ডের সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। মন্ত্রণালয় থেকেও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তাই কোরবানির চামড়ার বিষয় নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram