ঢাকা
৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:১৩
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

ঊর্ধ্বগতির বাজারে গরিবের পাতের পুষ্টি উধাও

খাদ্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, সে হারে বেতন-ভাতা না বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের মানুষদের অবস্থা খুবই করুণ। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। গরিবের পাতে এখন আর সামান্য পুষ্টিটুকুও নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোটিনের ঘাটতির কারণে তাদের মধ্যে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুরা কম খেলে বা অতিপ্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো না পেলে তারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এই অপুষ্টি দীর্ঘ মেয়াদে দেশের উৎপাদনশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গৃহকর্মী সালমা বেগমের সঙ্গে। সালমার শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কাজে আর আগের মতো মনও নেই, জোরও নেই।

সালমা রোজ কাজে এসে বলেন, 'আপা ভাতের মারডা ফেইলেন না; আমি খামু, ভাতের মারে নাকি অনেক শক্তি'। পরে সালমা ঊর্ধ্বগতির বাজারে তার অভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, 'কাম করে যে ট্যাকা পাই, এই দিয়া দুই পোলা-মাইয়ার খাওন, বাসা ভাড়া দিয়া নিজের জন্যে কিছুই থাকে না। ডাক্তার ওষুধ লিখা দিছে, কিন্তু কিনতে পারি না।

মো. স্বপন মিয়া পেশায় একজন গাড়িচালক, তিনি বলেন, 'আমার গ্রামে বুড়া বাপ-মায়ের জন্যে ট্যাকা পাঠাইতে হয়। আর নিজের কাছে যে ট্যাকা থাকে তা দিয়ে প্রথমে চাল কিনা ফেলি, তার পর সারা মাস সবজি ডাল তেল ভর্তা দিয়ে মাস পার করি। আমার বউ বাসাবাড়িয়ে কাজ করে, যে ট্যাকা পায় তা দিয়া ঘরভাড়া দেই, বাচ্চারা সপ্তাহে এক-দুই দিন মাছ-মাংস খাইতে বায়না ধরে, এখন বউ বাজার থেইক্যা মুরগির গিলা-কলিজা কিনা আনে, মাছের ছোট ভাগা কিনে আনে, যেই দিয়া কোন রকমে মাস চলে। আগে বয়লার মুরগি কিনতাম, পাঙাশ মাছ কিনতে পারতাম, এখন সেটাও পারি না। বড় ছেলেটার বয়স ১১ বছর, মাদ্রাসায় যাইত, এখন আকার অভাবে মাদ্রাসা যাওয়া বন্ধ করে নিছি। তারে একটা গ্যারেজে পেট চুক্তিতে কাজ শিখতে দিছি।

গৃহকর্মী রিনার ছয় সদস্যের পরিবার। রিনা মাসে রোজগার করেন ১০ হাজার টাকা আর তার স্বামী রাসেল মিয়া রিকশা চালান মাসে ১৫ দিন। তিনি পান ১৫ হাজার টাকা। এই ২৫ হাজার টাকায় তাদের সংসার চলে। বাড়িতে তিন সন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়িও থাকেন। রিনা বলেন, 'আমাদের দুইজনের রোজগারে আগে সংসার ভালোই চলত, কিন্তু এখন আর চলতাছে না। কোনো মতে খাইয়া না খাইয়া বাইচ্যা আছি। বড় ছেলেটার স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিছি।

পণ্যের দামের উর্ধ্বগতির সঙ্গে ছুটতে গিয়ে সালমা, স্বপন মিয়া কিংবা রিনার মতো স্ব সীমিত আয়ের মানুষের এখন টিকে থাকাই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে। পাত থেকে বাদ পড়ছে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর অনেক খাবার।

পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিনের পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকায় শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ, পানি ও চর্বি-এই ছয় ধরনের খাদ্যের সমন্বয় থাকতে হয়। একজন মানুষের প্রতিদিনের খাবারে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শর্করা, ১৫ শতাংশ প্রোটিন ও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ স্নেহজাতীয় খাবার প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় হলে স্বাভাবিকভাবেই তা স্বস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। সুষম খাবারের ঘাটতি হলে তা সরাসরি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার অপরও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বৈশ্বিক কৃষ্ণ সূচক বা গ্লোবাল হাজার ইনডেক্স (জিএইচ আই) ২০২৪ এর কথা অনুয়ায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। শিশু ও নারীর অপুষ্টি মারাত্মক পর্যায়ে। অপুষ্টিজনিত কারণে ২৩.৬ শতাংশ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে এবং ৩ শতাংশ জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যাচ্ছে। অপুষ্টিজনিত কারণে দেশে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার শিশু খর্বকায়। নারীদের পুষ্টির ঘাটতি পরবর্তী সময়ে গর্ভজাত শিশুর জন্য ক্ষতিকর। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক-২০২৪ এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ইউএসএমইডি-এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ গর্ভবতী মা ও শিশু আগে থেকেই পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। লাগামহীন দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ খাবারের পরিমাণ কমলে আগামীতে পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা আরো বাড়তে পরে। আমাদের দেশে গরিবের প্রোটিন বন্য হয় ডিম ও দুধকে। কিন্তু এসব পণ্য ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশু-কিশোরদের ওপর।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, পণ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে দেশের ১২ কোটি ৫২ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে না। এটি ছিল ২০২১ সালের হিসাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।

ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, যখন সবকিছুর দাম বেড়ে যায়, তখন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো শুধু পেট করানোর জন্যে বা শুধা নিবারণের জন্যেই গেয়ে থাকেন। কিন্তু পেট ভরলেই তো আর পুষ্টি নিশ্চিত মায় না তারা কেবল শর্করা খায়, প্রোটিনের ঘাটতি থেকে যায়। আর প্রোটিনের অভাবে তাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে তাদের তোপ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, স্বাস্থ্যের অবনতি হায়, ওজন কমে যায়; বাচ্চাদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, পেশির গঠন ঠিকমত হয় না। এই পুষ্টিবিদ বলেন, বিকল্প সোর্স থেকে পুষ্টি নিতে হবে যেমন- জল খেতে না পারলেও রঙিন শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে, সেখান থেকে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন পাওয়া যায়। গাঁজর, মিষ্টি কুমড়া, বিট-রুট থেকে ফলের বিকল্প পুষ্টি। পাওয়া যেতে পারে। মাছ- মাংস দুধ কেনা না গেলেও ডিম ও ডাল থেকে যেই প্রোটিনের অভাব পূরণ করা যায়। ডালটা সহজলভ্য সেটা পরিবারের সবাই খেতে পারেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram