গত ১৭ মে রাতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ২৬ মে রাতে নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি ও ২৭ মে রাতে পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডের একটি কারখানা থেকে ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ।
এবার ‘ওয়েল ফেব্রিক্স’ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তরিকুল ইসলামসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তরিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামের ভাই। সোমবার (২ জুন) রাত ৯টার দিকে নগরের চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইউনিফর্মের কাপড়ের গাড়িসহ এ চারজনকে আটক করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) চান্দগাঁও থানা-পুলিশ।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, কেএনএফের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে সন্দেহে ‘ওয়েল ফেব্রিক্স’ কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে গাড়িতে রোল করা কাপড়সহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তরিকুল ইসলামের পরিচয় নিশ্চিত করলেও বাকিদের বিষয়ে কিছু জানাননি ওসি।
গত ২৭ মে রাতে পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, জব্দ করা পোশাকগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের ইউনিফর্ম। মহালাসিন মারমা নামের এক ‘সন্ত্রাসী’ ৫০ লাখ টাকার চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরি করতে দিয়েছিলেন।
এর আগে ২৬ মে রাতে নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি ইউনিফর্ম উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।
ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ এনেছিলেন।
ফেসবুকে পেজ খুলে দু-তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কেএনএফ। পাহাড়ের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। সংগঠনটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। একপর্যায়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের সশস্ত্র সংঘাত হয় কয়েকবার। পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।