শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৪৮ হাজার ৫৩৬টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় খামারে প্রস্তুত করা এসব পশু চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ৩ হাজার উদ্বৃত্ত থাকবে। খাবারের মূল্য ও লালন-পালন খরচ বেশি হওয়ায় দাম আগের চেয়ে চড়া থাকার সম্ভবনা রয়েছে। কোনো রকম রাসায়নিক খাবারের পরিবর্তে খামারের পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার ভূষি, খৈল ও ঘাস খাইয়েই মোটাতাজা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন খামারিরা। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর, খামারি, বেপারি, গৃহস্থ ও কোরবানিদাতারা আশা করছেন, বাজেটের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত পশু মিলবে। এ বছর চোরাপথে ভারত থেকে কোরবানির পশু প্রবেশের কোনো শঙ্কা নেই। মায়ানমার হতে চোরা পথে কোরবানির পশুর অনুপ্রবেশের গুঞ্জন চললেও সরকারিভাবে কঠোর অবস্থানের বিষয়টি জানান প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস সূত্র জানায়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার কোরবানির জন্য উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১৫৭টি মোটাতাজাকরণ খামারসহ ছোট বড় মোট ২০৫টি খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৫৩৬টি বিভিন্ন ধরনের পশু। উপজেলায় এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার ৯১৫টি। চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে ২ হাজার ৬২১টি পশু। মজুদ পশুর মধ্যে গরু ৩১ হাজার ১৮৭টি, ছাগল ১০ হাজার ৭৭০টি, মহিষ ৩ হাজার ৫৮৬টি, ভেড়া ২ হাজার ৯৯৩টি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত দিনে কোরবানির পশু ও সারা বছর খাওয়ার জন্য গোশতের চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। গত কয়েক বছর ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর সরকারি ও বেসরকারিভাবে পশু উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়। এতে দেশে উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানি ও সারা বছর খাওয়ার গোশতের চাহিদা মিটছে। তবে আগের চেয়ে পশু ও গোশতের দাম অনেক চড়া। এবছর চামড়ার মূল্যও আগের চেয়ে বহুগুণে বাড়ার আশ্বাস পেয়েছেন। দেশীয় পশুর মাধ্যমে কোরবানি ও খাওয়ার গোশতের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকছে। খাদ্য ও পশু লালন-পালনের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবার প্রত্যাশিত বরাদ্দে কাঙ্ক্ষিত পশু মিলছে না। এতে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কোরবানির পশু কেনা নিয়ে সংকটে পড়বেন।
খামারিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আর কয়েকদিন পরই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। যে পরিমাণ দেশি গরু ও ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে, এগুলো দিয়েই বাঁশখালী উপজেলার মানুষের কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে তারা এসব পশুর প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। তারা বলছেন, প্রতি বছর গো-খাদ্য ভূষি, ধানের কুড়া, খৈল, খড়, ঘাসসহ গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পশু পালনে আগের চেয়ে ব্যয় বাড়ানোর ফলে কোরবানির হাট-বাজারে পশুর দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী বলেন, 'কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে এবার বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। আমাদের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রতিনিয়ত খামারিদের নানাভাবে পরামর্শ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কোনো প্রকার রাসায়নিক খাবার ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক দানাদার খাবার, কাঁচা ঘাস এসবই খাওয়ানো হচ্ছে। আমাদের এখানে ৩০০ থেকে ৮০০শ কেজি ওজনের পর্যন্ত গরু রয়েছে। আশা করছি এবছর খামারিরা ভাল দাম পাবে।'
তিনি আরও জানান, 'তাদের নজরদারির কারণে প্রাণি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে পশু মোটাতাজা করা হয়নি বললেই চলে। তিনি আশা করেন, এ বছর কোরবানির পশুর বাজার মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। তাছাড়া, গরু বেচা-কেনার হাটেও আমাদের মনিটরিং থাকবে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বিশেষ করে গুনাগরী, টাইমবাজার, চাম্বল বাজারে আমাদের মেডিক্যাল টিমের বুথ বসানো হবে।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, 'আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে এ উপজেলায় প্রায় ২০টি পয়েন্টে বাজার বসবে। আমরা বাজারে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাজার ইজারাদারদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি। তাদের বলা হয়েছে পর্যাপ্ত নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম রাখতে। পশুরহাটে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে টহল বৃদ্ধি করার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় হাট কেন্দ্রিক পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করার কথাও বলেন তিনি।