ঢাকা
১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:৫১
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২২, ২০২৫

ভিন্ন পেশার মোড়কে মাদক ব্যবসা

সম্প্রতি কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ নতুন মাদক ব্যবসায়ীর তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। তারা ভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য সরবরাহ করছে। বেড়েছে ইয়াবার ব্যবসা। সূত্র ডিএনসি, র‌্যাব ও পুলিশ।

ডিএনসির গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বর্তমানে ইয়াবার পাচার বেড়েছে। কক্সবাজার ছাড়াও সিলেট ও কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার পাচার বেড়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় এবং যথেচ্ছ ব্যবহারে তরুণসমাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাদকের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে আরো কঠোর হতে হবে।

সীমান্তে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণে কাজ করা একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িচালক ও হেলপার। এ ছাড়া সবজি বিক্রেতা. দোকানি, সড়ক শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, রিকশাচালকের বেশেও মাদক বিক্রি হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কিছু সোর্সও মাদক ব্যবসায় জড়িত।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য বলছে, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রেন, জরুরি পণ্যের ট্রাক, তেলের লরি, অ্যাম্বুল্যান্স ও পিকআপসহ বিভিন্ন যানে অভিনব কায়দায় মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে।

পাচার হয়ে আসা ইয়াবা, হেরোইন, মদ, বিয়ার, গাঁজা, ফেনসিডিল ও আইসসহ অনন্ত ২৫ ধরনের মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা হচ্ছে।
ডিএনসি সূত্র বলছে, দেশে ইয়াবা ও হেরোইনসহ সব ধরনের মাদক বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে। জব্দ করার হারও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংস্থার তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের শুরুতে ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ ও ইনজেকটিং ড্রাগ জব্দের পরিমাণ বেড়েছে। যেখানে গত বছর গড়ে প্রতি মাসে ১৯ লাখ চার হাজার ৮১৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতেই দ্বিগুণের বেশি (৩৯ লাখ ৮৫ হাজার ২০৫ পিস) ইয়াবা জব্দ করা হয়।

অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধারও বেড়েছে। মাদকদ্রব্য বিষয়ক মামলাও বেড়েছে। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে মামলা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০৫টি। এ বছর জানুয়ারিতেই মাদকদ্রব্যসংক্রান্ত মামলা হয়েছে ছয় হাজার ১৬৬টি। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে গত বছরে সাত হাজার ৭১ জন এবং গেল জানুয়ারিতেই সাত হাজার ৫০৫ জন।

ডিএনসি সূত্র বলছে, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে কক্সবাজার জেলার রামু থানার ওয়ারলেস অপারেটরসহ (কনস্টেবল) তিনজনকে ইয়াবাসহ আটক করে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সময় তাদের ব্যবহৃত গাড়িসহ সাত হাজার ৫০০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মোস্তফা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম একজন পুলিশ সদস্য। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা তাঁর কাজ। অথচ তিনি নিজেই নিজ পেশার আড়ালে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আরো কিছু সদস্যের নাম এসেছে। এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ওই কনস্টেবল কক্সবাজার রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামের একটি ভাড়া বাসায় থেকে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। তিনি প্রাইভেট কার ব্যবহার করে মাদক পাচার করতেন। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন খুচরা মাদক ব্যবসায়ীর যোগাযোগ ছিল। তারা ভিন্ন পেশার আড়ালে ছদ্মবেশে মাদক বিক্রি করত।

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেন, প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হচ্ছে। এসব ব্যবসায় জড়িত অপরাধীরাও গ্রেপ্তার হচ্ছে।

শুধু পুলিশ নয়, বর্তমানে মাদক ব্যবসায় রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। সম্প্রতি কক্সবাজারে কোস্ট গার্ড ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে ২১ মাদক ব্যাবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জন রোহিঙ্গা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ লাখ পিস ইয়াবা।

গত শুক্রবার দুপুরে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, বোটে বরফের ভেতর বিশেষভাবে লুকিয়ে রাখা ছিল পাঁচ লাখ পিস ইয়াবা। এসব রোহিঙ্গাও ভিন্ন পেশার আড়ালে মাদক পাচার করছে।

আটক ইয়াবা পাচারকারীদের মধ্যে তিনজন কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং বাকিরা কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

স্বামী-স্ত্রীর রমরমা ইয়াবা ব্যবসা : ডিএনসি সূত্র বলছে, সীমান্ত থেকে মাদক এনে ঢাকায় বিক্রি বেড়েছে। এরই মধ্যে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মাদকের একটি বড় চালান ধরা পড়ে। এক কোটি দুই লাখ টাকা সমমূল্যের ৩৪ হাজার ২০০ পিস ইয়াবাসহ সাথী আক্তার রিক্তা ও তার স্বামী সানজিদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএনসির ঢাকা মেট্রো. কার্যালয়ের (দক্ষিণ) উপ-পরিচালক মানজুরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত। তারা সবজি বিক্রেতার আড়ালে মাদক কারবারে জড়িত। সম্প্রতি ইয়াবার একটি বড় চালান টেকনাফ থেকে ঢাকায় এনে তারা বিক্রির পরিকল্পনা করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, স্বামী-স্ত্রী মিলে ভাড়াকৃত ফ্ল্যাট বাসায় মাদক বাণিজ্য করে আসছিল। তাকে (স্ত্রী) সঙ্গে নিয়ে তার স্বামী প্রায়ই টেকনাফে গিয়ে ইয়াবার বড় চালান সংগ্রহ করে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় পাইকারি সরবরাহ করে আসছিল।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই মাদক ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram