ঢাকা
১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:০৯
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ১৩, ২০২৫

বাউফলে বৈশাখী মেলা উপলক্ষে হরেক রকমের মাটির পণ্যের হাট

অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পাখি, পুতুল, মাছ, ফল, গাছপালা, ধর্মীয় কৃষ্টি ও বঙালির ঐতিক্যবাহী সংস্কৃতি ইত্যাদিকে অবলম্বন করে পটুয়াখালীর বাউফলের মৃৎ শিল্পীরা তৈরী করেছেন হরেক রকমের মাটির পণ্য। গত এক সপ্তাহ ধরে শিল্পীদের চোখে ঘুম নেই। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া অর্ডারগুলো সরবরাহ করছেন শ্রমিকরা। শিশু-কিশোরসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই তৈরী করা হচ্ছে হরেক রকমের মাটির শিল্প।

মৃৎশিল্পকে কেন্দ্র করে মৌসুমী উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন গ্রামের নারী-পুরুষেরা। উপজেলার মদনপুরা, বগা, কনকদিয়া ও বাউফল সদর ইউনিয়নের মৃৎশিল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিক-মালিকদের কর্মচাঞ্চল্য। এ যেন এক স্বর্গপুরির সাজানো বাগান।

বৈশাখ মাসে গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত মেলাকে কেন্দ্র করে তৈরী করা হয়েছে বিভিন্ন পাখি, ঘোড়া, মাছ, ফুল, পুতুল, গাছ-পালা। অপরদিকে শহর কেন্দ্রিক মেলাকে কেন্দ্র করে তৈরী করা হয়েছে ডিনার সেট, হরেক ধরণের শো-পিচ, কাপপিরিচ, মনিষিদের ছবি, ধর্মীয় ছবি, গ্রামীণ জনপদের ছবি ইত্যাদি। মৃৎশিল্প এলাকার কর্মকান্ড দেখলে মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা এদেরকে নিপুণ কাজ করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।

মৃৎশিল্পে আনা হয়েছে আধুনিকতার ছাপ। পোড়ানো এবং হাতের কিছু শিল্পকর্ম ব্যতিত ভারী ধরণের কাজ এখন মেশিনেই করা হচ্ছে। আড়ং, কারিতাস, কোর দি জুট ওয়াকর্স সহ শহরের অধিকাংশ বড় বড় শো-রুমে বাউফলের মৃৎশিল্প পাওয়া যাচ্ছে। শো-রুম কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক মালামাল তৈরী করা হয়। এজন্য এখানকার শিল্পীরা বিসিকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে আধুনিক প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। যার কারণে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাউফলের মৃৎশিল্প ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। ফলে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রাও।

বাউফলের আধুনিক মৃৎশিল্পের পথিকৃত অতিশীপর বৃদ্ধ বিশ্বেশ্বর পাল জানান, প্লাস্টিক বিপ্লবের ফলে মৃৎশিল্প হরিয়ে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু অনেক প্রচেষ্টায় বাউফরের মৃৎশিল্পে আধুনিকতায় রুপ দেওয়ায় এখন আবার মাথা তুলে দাড়াতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

বরুন মৃৎশিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক বরুন পাল জানান, বাউফলে প্রায় আড়াইশো ধরণের মাটির পণ্য তৈরী করা হয়। যার চাহিদা দেশব্যাপি এবং দেশের বাহিরেও রয়েছে। এই শিল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। যেটা আবহমান থেকে চলে আসছে। এখানে তৈরী হচ্ছে গ্লাস, মগ, প্লেট, তরকারির বাটি, মিষ্টির বাটি, জগ, ফল প্লেট, পা-ঘষনি, ফুলদানী, চায়ের কাপ-প্রিচ, ডিনার সেট, মোমদানী, এ্যাস্ট্রে, কয়েল দানী দৃষ্টিনন্দন নানা পণ্য। কোন ধরণের ক্যামিক্যাল ছাড়াই মাটির এ পণ্য গুলোতে যে রং করা হয় তাও স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা এবং প্রকৃতিক সব উপাদান দ্বারা তৈরী। বিশেষ করে লাইট ওয়ারেঞ্জ রং এর মধ্যে মনমুগ্ধকর কালো যে সেট দেওয়া হয় তা একটি গাছের কস দিয়ে তৈরী করছে তারা। এক্ষেত্রে বাহিরের দেশে এই শিল্পের ব্যপকতা সৃষ্টির জন্য সরকারি উদ্যোগ দরকার।

তুরুন পাল জানান, তাদের তৈরী মাটির পণ্য ঢাকায় দৃক গ্যালারিতেও প্রদর্শন করা হয়। যার ফলে ক্রেতা বা ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে চয়েস করে মালামালের অর্ডার করতে পারেন। বাউফলে এই শিল্পে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। গড়ে এই সিজনে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মালামাল তৈরী করা হয়।

কমল পাল জানান, আমরা গ্রামীণ জনপদের মেলা এবং এর চাহিদা মোতাবেক মালামাল তৈরী করি। অপরদিকে, শহুরের মেলা এবং তাদের চাহিদা মোতাবেক বেশি দামেরও পণ্য তৈরী করে থাকি। তিনি জানান, শহরের মানুষ ডিনার সেট, শো-পিচ, গ্রামীণ চিত্রভাস্কর্য, টি-সেট, ফুলদানি ইত্যাদি বেশি পছন্দ করেন। এর দামও অনেক। এই শিল্পের মূল কাঁচামাল হচ্ছে মাটি। একেক এলাকার মাটি দিয়ে একেক ধরণের পণ্য তৈরী করা হয়। বছরের বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করেই সর্বাধিক পণ্য তৈরী করা হয়। তার মতে, মৃৎশিল্পকে রক্ষা করতে হলে আধুনিক প্রশিক্ষণ, মেশিন স্থাপণ এবং দেশের বাহিরে এর চাহিদা বাড়াতে সরকারি সহায়তা দরকার।

বাউফলের সুধীমহল মনে করেন, মৃৎশিল্প আবহমান বাংলার একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকা দরকার। আমরা আসা করি সরকার এ বিষয়ে নজর দেবেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram