শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশনের তেইশের সিলায় লাগা আগুন পানি সংকটে যথা সময়ে নিভানো যায়নি। অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থলে পানি সরবরাহ করতে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে অন্তত ১২ ঘন্টা। ভাটির সময় খালে পানি না থাকায় এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সময় মত পানি ছিটাতে না পাড়ায় ১২ ঘন্টা সময় বেশি জ্বলতে হয়েছে সুন্দরবনকে। বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের ৪টি টিম, সিপিজি ও ভিটিআরটি টিমের সদস্যরা সার্বক্ষনিক প্রস্তুত থাকলেও পানির ব্যবস্থা না থাকায় তাদের অনেক সময় বসে কাটাতে হয়েছে।
ধান সাগর এলাকার ভিটিআরটি টিম লিডার মোঃ লুৎফর রহমান জানান, সময় মত পানি ছিটাতে পারলে রবিবার সন্ধ্যায়ই তেইশের সিলার আগুন নিভানো সম্ভব হতো। বনসংলগ্ন ভোলা খালে পানি না থাকায় বাড়তি সময় পুড়তে হয়েছে সুন্দরবনকে।
সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি সিপিজির স্থানীয় গ্রুপ লিডার মোঃ আবুল আসলাম তুহিন জানান, প্রতিবছর এভাবে বনে আগুন লাগলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। অধিক অগ্নিপ্রবন এলাকা ধানসাগরের খালগুলো গভীর করে কাটতে হবে যেন আগুন লাগলে দ্রুত পানি সরবরাহ করা যায়।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা দীপন চন্দ্র দাস জানান, রাতে পানি ছিটিয়ে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। খালে পানি না থাকায় রাত ১ টার দিকে পানি ছিটানো বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার সকালে আবারও আগুন লাগা স্থানে পানি ছিটানো শুরু হয়। পরিবেশ এখন প্রায়ই নিযন্ত্রণে। কোথাও কোথাও গুপ্ত আগুনের ধোয়া উড়ছে। যেখানেই ধোয়া দেখা যাচ্ছে সেখানেই পানির প্রবাহ দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মোঃ আবুবকর জামান জানান, আগুন লাগা স্থানের পার্শ্ববর্তী ভোলা খালে সময় মত পানি না পাওয়ায় আগুন নেভানো কাজ ব্যাহত হয়েছে। ওই খাল থেকে শুধু ভরা জোয়ারে পানি দেওয়া সম্ভব। তাই রাতে মাত্র তিন ঘন্টা পানি ছিটানো সম্ভব হয়েছে। সকালে আবার জোয়ারে পানি ছিটানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগুন এখন পুরোটাই নিযন্ত্রণে রয়েছে। ১০ একর বনভূমি আগুনে দগ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
উল্লেখ্য, ধানসাগর ক্যাম্পের কাছে তেইশের সিলায় সোমবার সকাল ৯ টার দিকে আগুন লাগে। বনবিভাগের ড্রোন প্রথমে এ আগুন দেখতে পায়। তখন কলমতেজির টেপার বিলের আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে বনবিভাগ ছুটে নতুন করে লাগা আগুনের স্পট তেইশের সিলায়। বনবিভাগ সেখানে ফায়ার লেন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্ত তাতে তেমন ফল হয়নি। ওদিকে ভোলা খালে পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিস টিম তাদের অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম নিয়ে যথাসময় ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারেনি। স্থানীয়দের ধারণা মতে প্রায় ১০ একর জুড়ে বনে আগুন লাগে।
বনবিভাগ দুটি স্থানের আগুন লাগার কারণ উদঘাটনের জন্য চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক দিপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।