হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়ায় আ’লীগ-বিএনপি’র মধ্যে সংঘর্ষে হাসিম মোল্যা (৩৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। নিহত হাসিম’র বাবা কাদের মোল্যা বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় খুলনার গাজীরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডা মোল্যাসহ ৩৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জন আসামী হয়েছে।
এজাহারের বিবরণে জানা যায়, আসামীদের সহিত মামলার বাদী পক্ষের গ্রাম্য ও দলীয় শত্রুতা রয়েছে। তারা যে কোন সময় যে কোন স্থানে বাদী পক্ষের লোকজনকে খুন জখম করার জন্য নড়াইল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি’র পরামর্শে ও সহায়তায় দলবদ্ধভাবে সুযোগ খুঁজতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ মার্চ সকাল অনুমান ৯টার দিকে আসামীরা সংঘবদ্ধভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটায়।
নড়াইল-১ আসনের আ’লীগ দলীয় এমপি বিএম কবিরুল হক মুক্তির নাম ৩৮ জন আসামীর মধ্যে না থাকলেও এজাহারে উল্লেখ করে আরও লেখা হয়েছে- ১নং আসামী খুলনার গাজীরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডা মোল্যা সাবেক সংসদ সদস্য বিএম কবিরুল হক মুক্তিকে ফোন দেয় এবং কথা শেষ করে হুকুম দিয়ে বলে যে, শালার বংশধররে খুন করে ফেলা। তখন আমার মেঝ ছেলে হাসিম মোল্যা উক্ত হুকুমের বিরোধীতা করায় ২নং আসামী হামীম মোল্যার হাতে থাকা চাইনিজ কুরাল দিয়া হাসিম মোল্যাকে খুন করার জন্য মাথা লক্ষ্য করে কোপ দেয়। উক্ত কোপ মাথার ডান পাশে লেগে মাথায় হাড় কাটা জখম হয়। পরে আসামী সোহান তার হাতে থাকা ছ্যান দা দিয়ে হাসিমের কপালে কোপ দেয়। এতে কপালে হাড় কাটা জখম হয়। অপর আসামী ইমদাদ তার হাতে থাকা রড দিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ীভাবে মারতে থাকে।
এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার ওসি রাশিদুল ইসলাম জানান, নিহত হাসিমের পিতা কাদের মোল্যা মঙ্গলবার রাতে ৩৮ জনকে আসামী করে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। তবে এমপি কবিরুল হক মুক্তির নাম সিরিয়ালে নাই। কিন্তু এজাহারের বিবরণে তার নাম আছে।
প্রসঙ্গত, কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাহিদ মোল্যার চাচাতো ভাই পার্শ্ববর্তী খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ঠান্ডু মোল্যা গ্রুপের লোকজনের সঙ্গে হামিদপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জনি মোল্যা গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকালে বিএনপির নেতা জনি মোল্যা কালিয়া উপজেলার গাজীরহাট বাজার থেকে ঠান্ডু মোল্যা গ্রুপের লোক আব্দুর রউফ মোল্যাকে বের করে দেয়। এরই জের ধরে শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের ঠান্ডু মোল্যা গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষ গ্রুপের বিএনপি নেতা জনি মোল্যা ও তার লোকজনের ওপর হামলা করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে হাসিম মোল্যা (৩৫), আব্দুল কাদের মোল্যা (৬০), আশিক (২০), পনি মোল্যা (৩০) ও জনি মোল্যাসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হন। অন্যান্য আহতদের সাথে হাসিম মোল্যাকে মুমূর্ষু অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জনি মোল্যা গ্রুপের হাসিম মোল্যা চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।